চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩ নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খানের ৭ মিনিটের একটি ইঙ্গিতপূর্ণ ফোনালাপের অডিও একুশে পত্রিকার হাতে এসেছে। অডিওতে এক নারীর সঙ্গে তুমুল প্রেমালাপ, বিয়ার খাওয়া, সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদলসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি।
এবার না হলেও আগামীতে কাউন্সিলর কফিলের এমপি নির্বাচন করার ইচ্ছার কথা উঠে আসে সেই অডিওতে। একপর্যায়ে সংসদ সদস্য মাঈনুদ্দিন খান বাদলকে গালমন্দ করে কথা বলতে দেখা যায় সেই ফোনালাপে। অবশ্য আলাপের পুরো সময়টাতে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে কফিলকে।
একপর্যায়ে তিনি বিয়ার খাচ্ছেন বলেও জানান ফোনালাপে। পুরো অডিওটিতে থেমে থেমে কফিলের কথা শোনা গেলেও ওই প্রান্তের নারীকণ্ঠটি কে, তিনি কী বলছেন তা জানা যায়নি।
শুরুতেই ওই প্রান্তের নারীটিকে কফিল বলতে শোনা যায়, বেরিয়ে গেছি ঘর থেকে ঝগড়াঝাটি করে। আছে একটা ব্যাপার আর কী! তুমি নাসুরে বলো না একটা ফোন দিতে আমাকে। সেটা আর কী! আমি তো চিন্তা করি। নাসুকে বলোতো…আরে সারারাত কথা বলবো তোমার সাথে। তুমি নাসুকে বলো। বলেন কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান।
এরপর একপর্যায়ে ইমোশনাল হয়ে উঠেন কফিল। বলেন, মাই সুইট হানি…আই লাভ ইউ…ওয়াম ওয়াম! তুমি তো আমার অন্তরে আছ। আমার সারা শরীরে আছ। আছ না…। আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ। ওয়াম ওয়াম। জীবনেও ভুলব না। মৃত্যুর আগপর্যন্ত ভুলবো না। মৃত্যুর পর ভুলে যাবো।
এ পর্যায়ে কফিল দেখা হবে কিনা জানতে চান ওই নারীর কাছে? ওই প্রান্ত থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলায় খুশিতে কফিল বলে উঠেন ওয়াও, ঘুরবো যে পরীর মতো। এরপর বলেন, আরলি মর্নিং বলো। আমি গিয়ে ঘুমাইছি।
আমি বিয়ার খাচ্ছি তো। তুমি খাবে একটা। মাই সুইট ডারলিং। আই লাভ ইউ। ওয়াও! খাবে, আনবো আমি। আমার সুইট ডারলিং বললে আমি এখন চলে আসবো তোমার বাড়িতে। বলেন কফিল।
মহিলাটি বিয়ারের অফারে সাড়া দেওয়ায় খুশি হন কফিল। বলেন, সত্যি! আচ্ছা আমি বাদল ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি। ওখানে ঝগড়াঝাটি করে ১০টা বিয়ার নেবো। তোমার কাছে আসবো। ঝগড়া করার জন্য যাচ্ছি বিয়ার-টিয়ার খাই। ওই শালার পুতরে মারি ফেলবো আমি।
এরপর বলেন, কোনো সমস্যা হবে না। বাদল ভাই আল্লাহর রহমতে…। কাজের মানুষ আমি। আমি বেঈমান না তো, বেঈমানের ঘরে আমার জন্ম না। এটা বাদল ভাই ভালো করে জানে, বোঝে।
আজকে এটা নিয়ে আলোচনা করবো যে। তুমি শালার পুতের জন্য আমি এতকিছু করছি। তুমি শালার পুত আমার জন্য কী করছো বলো। ওই প্রান্তের নারীকে জানান কফিল।
এরপর বলেন, না বুঝে খামোকা কিচিরমিচির করে। একবারে অমানুষের বাচ্ছা তো সেটা। মানুষের বাচ্ছা হলে করতো না! অভদ্র, বেয়াদব, ইডিয়ট। কাকে ইঙ্গিত করে এসব কথা তা বুঝতে না পারলেও পরের আলাপগুলো সহজে বোঝা যায়।
এবার ওই নারীকে বিয়ের অফার করেন কফিল। বলেন, ‘চলো বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে করে ফেললে ভালো হবে মনে হয়, তোমাকে। হাহাহাহা। ভাত খাইছ, খানা খাইছ। এখন কয়টা, দশটা বাজে। দেরি করে খাওয়া ভালো না। টেলিফোনে কেয়ার নেন কফিল।
এরপর প্রসঙ্গ পাল্টে যায়। আবারও উঠে আসে মাঈনুদ্দিন খান বাদল প্রসঙ্গ। কফিল বলেন, আমাকে বলতে হবে যে, তুমি নমিনেশন পাবে। আর না পেলে আমি করবো ইলেকশন। এগুলো নিয়ে আর কী-আগামীতে ওনি ইলেকশন করবেন, না আমি করবো। আর ওনি নমিনেশন পাবেন এটার নিশ্চয়তা কী!
কফিল জবাব দেন, পরিচিতি আল্লাহর রহমতে আছে আমার! এখন থেকে ফাইট করতে হবে। এবার না নিলে আগামীবার নিতে হবে। অনেক অনেক ঝামেলা। আমার নেশা পাচ্ছে। আমি তোমার জন্য বিয়ার আনবো তো। তুমি বের হবে আমি ফোন দিলে। একটু লেট হবে আর কী, বারটা বাজবে। বের হতে পারবে, ঠিক আছে? জানতে চান কফিল উদ্দিন খান।
কফিল জবাব দেন, এরচেয়ে বেশি করছি আমি ওইদিন। তোমাদেরকে বিদায় দিচ্ছি আমি। টেক্সিতে করে যাচ্ছো। হাত নাড়তেছি। হ্যাঁ কোথায় হারিয়ে গেছিল তো। বেহুশ হয়ে পড়ে আছিলো। রইন্যা অনেকক্ষণ খুঁজে বের করেছে। প্রায় আধাঘণ্টা লাগছে। লোক একটা ফোন করছে রইন্যার মোবাইলে- ওমুক জায়গায় পড়ে আছে।
আচ্ছা এগুলো বলে লাভ নাই। বাদ দাও। বুঝি না তোমার কথা। বড় করে বল। ওহ, আমিও তো প্রথম। কী জ্যাম এখানে দুই নম্বর গেইট। আমি কথা বলবো না। রেখে দিচ্ছি। পরে কথা বলবো ৮টার সময়। আমি পারতেছি না গাড়ি চালাতে। আমি ফোন দেব তোমাকে, বিয়ার নিয়ে আসব আমি। তোমার সাথে দেখা করবো। আর নাসুকে বলো একটা ফোন দিতে আমাকে। বলেই ফোন রাখেন কমিশনার কফিল উদ্দিন খান।
এছাড়াও কফিলউদ্দিন খানের এধরনের আরও একাধিক ফোনালাপ ও শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিতপূর্ণ অডিও আছে একুশে পত্রিকার কাছে।
এসব বিষয় উল্লেখ করে রোববার রাতে টেলিফোনে কাউন্সিলর কফিলউদ্দিন খানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বারবার কথা বুঝতে পারছেন না জানিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি সরাসরি এসে এ বিষয়ে কথা বলবেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন।