রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কাকে স্বস্তির ছোঁয়া দিচ্ছে ভারত

প্রকাশিতঃ ২৮ মে ২০২২ | ১২:০৭ অপরাহ্ন


ফারুক আবদুল্লাহ : শ্রীলঙ্কা একটি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই দেশটি বহুমুখী অর্থনৈতিক আক্রমণের শিকার। খাদ্য, জ্বালানি এবং বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের ত্র্যহস্পর্শে দেশটি হাঁসফাঁস করছে। আগেও গৃহযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, আর্থিক মন্দা কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অভাবের সাথে দেশটি যুদ্ধ করেছে, কিন্তু কখনও এভাবে অর্থনীতির দশদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণের শিকার হয়নি।

এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ভারত তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রতি তাদের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এজন্য শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন মন্ত্রীপরিষদ মন্ত্রী নমাল রাজাপাকসে গত সোমবার শ্রীলঙ্কায় ২ বিলিয়ন রুপির মূল্যের মানবিক সহায়তা এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সর্বশেষ রাউন্ডের জন্য ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। নমাল রাজাপাকসে যিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ্রা রাজাপাকসের ছেলে। তিনি বলেছেন যে, ভারত বছরের পর বছর ধরে দেশের বড় ভাই, এমন কিছু যা তারা কখনই ভুলবে না। নমাল এক টুইট বার্তায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

ভারত রবিবার কলম্বোতে পৌঁছে যাওয়া দ্বীপের দেশটিতে ২ বিলিয়নের বেশি মূল্যের মানবিক সহায়তা চালান হস্তান্তর করেছে। চালানটিতে ৯ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ৫০ মেট্রিক টন দুধের গুঁড়া, ২৫ মেট্রিক টনেরও বেশি ওষুধ এবং অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ করেছে।

কলম্বো পেজ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কা সরকার সারাদেশে বেশ কিছু সুবিধাভোগীদের মধ্যে চালানটি বিতরণ করবে। সুবিধাভোগীদের মধ্যে রয়েছে উত্তর, পূর্ব, মধ্য, পশ্চিম প্রদেশ এবং সমাজের বিভিন্ন অংশকে কভার করে। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে দ্বীপদেশে বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে সহায়তার জন্য ভারতের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কার প্রতি এই সহায়তা ঠিক তখনই আসে, যখন দ্বীপরাষ্ট্রটি তার ভয়াবহ অর্থনৈতিক ঘাটতি, খাদ্য ও জ্বালানির ঘাটতি, উর্ধ্বমুখী মূল্য এবং বিপুল সংখ্যক মানুষকে প্রভাবিত কওে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবেলায় লড়াই করছে। এর আগে ভারত সরকার অনুদানের ভিত্তিতে শ্রীলঙ্কায় শুকনো রেশন, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাঠিয়েছিল।

সংকটের এই সময়ে, ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য শ্রীলঙ্কাকে সাহায্য করার জন্য ভারত ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মুদ্রা অদলবদল, প্রয়োজনীয় পণ্যগুলির জন্য ক্রেডিট লাইন এবং ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে নগদ-সংকোচিত কলম্বোতে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

একইসঙ্গে ভারত সরকারের পাশাপাশি ভারতের বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সহায়তা পাঠিয়েছে। সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রতি সমর্থনের এই বহিঃপ্রকাশ ভারত সরকারের অর্থনৈতিক সহায়তার বাইরে যা এই বছরের জানুয়ারি থেকে প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। আর ২০২১ সালের নভেম্বরে ভারত শ্রীলঙ্কাকে ১০০ টন ন্যানো নাইট্রোজেন তরল সার দিয়েছিল, কারণ তাদের সরকার রাসায়নিক সার আমদানি বন্ধ করেছিল।

এছাড়াও ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) ৪০০ মিলিয়ন ডলারের কারেন্সি অদলবদল বাড়িয়েছে এবং কয়েকশো মিলিয়ন ডলার মূল্যের এশিয়ান ক্লিয়ারেন্স ইউনিয়নের অধীনে শ্রীলঙ্কার সেন্ট্রাল ব্যাংকের বকেয়া পেমেন্ট বিলম্বিত করেছে। ১০ এপ্রিল ভারত ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির হারের মধ্যে খাদ্য ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় আইটেম সংগ্রহের জন্য নিয়মিত লড়াই করছে, এমন জাতির লোকদের সহায়তা হিসাবে কলম্বোতে সবজি এবং দৈনিক রেশন আইটেম পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে চিনি, চাল এবং গমসহ জাহাজ পাঠিয়েছে।

এদিকে ইতিমধ্যে জাপান প্রয়োজনীয় খাদ্য রেশন এবং স্কুলের খাবার কর্মসূচির জন্য একটি ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি) প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১.৫ মিলিয়ন প্রদানের সিদ্ধান্তের কথাও ঘোষণা করেছে। শ্রীলঙ্কা কাতসুতি কোতারোতে জাপানের অন্তর্বর্তীকালীন চার্জ ডি অ্যায়েয়ার্স বলেছেন, আমরা ঘোষণা করতে পেওে আনন্দিত যে, জাপান সরকার প্রায় ১৫ হাজার শহরে ও গ্রামীণ জনগণ এবং ৩ লাখ ৮০ হাজার স্কুল শিশুদেও জন্য সুরক্ষিত চাল, ডাল এবং তেলসহ তিন মাসের প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহের জন্য ডব্লিউএফপি এর মাধ্যমে ১.৫ মিলিয়ন ডলার জরুরি সহায়তা প্রদান করবে। আমরা আশা করি যে, মানবিক সহায়তা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে শ্রীলঙ্কার জনগণের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি উন্নত করতে সাহায্য করবে। এছাড়া ডব্লিউএফপি প্রতিদিন বিনামূল্যেও স্কুলের খাবারের জন্য চাল সংগ্রহ করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য সমন্বিত রেশন প্যাক বিতরণ করবে।

ভারত বলছে যে, শ্রীলঙ্কার চিরন্তন এবং নির্ভরযোগ্য বন্ধু হিসেবে নয়াদিল্লি দ্বীপরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্পূর্ণ সমর্থন করে।

লেখক: সাংবাদিক।