মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১

ভবন তুলতে পুকুর ভরাট

প্রকাশিতঃ ২০ মে ২০২২ | ৬:০১ অপরাহ্ন


এম কে মনির : পুকুর ও জলাশয় ভরাটের আইন লঙ্ঘন করে চট্টগ্রাম নগরের ১২ নং ওয়ার্ডের সরাইপাড়া বাচা মিয়া সড়কে শত বছরের পুরোনো একটি পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ওই পুকুরে বালু ফেলে ৯০ শতাংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলা হয়েছে পুকুর পাড়ের বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছও।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে সরেজমিনে সরাইপাড়া বাচা মিয়া সড়কের ইউনুস সওদাগরের কলোনি গলিতে গিয়ে দেখা যায়, ১০ শতকের বেশি আয়তনের পুকুরটির চারপাশে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। পুকুরের মাঝখানে লম্বালম্বিভাবে তোলা হয়েছে দুটি দেয়াল। পুকুরের পাড়ে থাকা বেশ কয়েকটি বড় গাছ কাটতে দেখা গেছে কয়েকজন শ্রমিককে।

স্থানীয়রা জানান, পুকুরটি শত বছরের পুরোনো। আগে বাচা মিয়া সড়কের বাসিন্দারা ওই পুকুরটির নিত্য ব্যবহার করতেন। তাছাড়া পুকুরটিতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হতো। বালু দিয়ে ভরাটের পর মাছগুলো চাপা পড়ে গেছে। তারা আরও জানান, এলাকার ৭-৮ জন স্থানীয় বাসিন্দা ওই পুকুরের মালিক। তারা যৌথভাবে পুকুরটি ভরাট করছেন। কয়েকজন মালিক ভবন নির্মাণও শুরু করেছেন।

জানা যায়, বাচা মিয়া সড়কের ইউনুস সওদাগরের কলোনি এলাকার মো. এরশাদ, ইউনুস সওদাগর, খোরশেদ আলমসহ আরও কয়েকজন পুকুরটি ভরাটের কাজ করছেন।

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ।

জানতে চাইলে পুকুরের পাড়ে গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘পুকুরের মালিক অনেকজন আছেন। তাদেরকে আমরা ভালো করে চিনি না। পুকুর ভরাটের পর গাছ কাটার জন্য আমাদেরকে আনা হয়েছে।’

পুকুরটির মালিকদের মধ্যে একজন খোরশেদ আলম; তিনি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। আসলে আপনার সাথে দেখা করব।’ পুকুর ভরাট করা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে জানালে খোরশেদ বলেন, ‘আমি এসবের সাথে জড়িত নয়। আমি কিছু জানি না। আপনার সাথে দেখাও করব না।’

ভবন তুলতে পুকুর ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের ১২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আমিন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে কিছু জানি না। এসব আমার নলেজে নাই।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপপরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা এর আগে অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়েছি। পুকুর ভরাট করা হচ্ছে, সেটি সঠিক। কিন্তু কারা পুকুরটি ভরাট করছে, তা জানা যায়নি। কেউ সামনে না আসায় পুকুর ভরাটের সাথে জড়িতে কাউকে আমরা পাইনি। সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

চট্টগ্রাম জলাশয়-জলাধার রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট রেহানা বেগম রানু একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘জলাশয়-জলাধারগুলো রক্ষা করতে হবে আমাদের প্রয়োজনে। সাময়িক লাভের কথা চিন্তা করে আমরা জলাশয়-জলাধার ভরাট করে ফেলি। জলাশয়গুলো অধিগ্রহণ করে সরকারের সংরক্ষণ করা উচিত।’

পুকুরের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, ‘একটি পুকুরের পানি সবাই ব্যবহার করে। মানুষ গোসল করবে, সাঁতার কাটবে। এটি অনেক বড় সুবিধা মানুষের জন্য। এছাড়া পুকুর ভরাট হলে ভবিষ্যতে পানির সংকট তৈরি হবে। আমরা ২০ ভাগ পানি পান করি আর ৮০ ভাগ ব্যবহার করি। কাজেই ব্যবহারের পানির অন্যতম উৎস পুকুর।’

‘শুধু তাই নয়, কোন একটি এলাকায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিস এসে পৌঁছাতে সময় লাগে। এসময় আগুন নেভাতে দ্রুত পুকুরের পানি ব্যবহার করা যায়। বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির পানি জলাশয়-জলাধারে জমা হয়। ফলে মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচে। অন্যদিকে পুকুরে স্থাপনা-ভবন নির্মাণ করা হলে তা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। কেননা এসব ক্ষেত্রে অনেক নিয়ম মানা হয় না।’