রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

বিদেশি নাগরিক হত্যা : নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি

| প্রকাশিতঃ ৭ অক্টোবর ২০১৫ | ৬:০৩ অপরাহ্ন

 

সম্পাদকীয়

writingকয়েকদিনের ব্যবধানে পর পর দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা দেশের জন্য এযাবতকালের সবচেয়ে বড় দুঃসংবাদ। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে, বিশ্ববাসীর কাছে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশের অভ্যন্তরীণ একটি মহল ঘৃণ্য এই তৎপরতা শুরু করেছে- ইতোমধ্যে এমন আশঙ্কা, এমন বক্তব্য এসেছে নানা জায়গা থেকে।

সবশেষ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, বিশ্বকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লাগানোর জন্য জাপানি ও ইতালির নাগরিক হত্যা করেছে বিএনপি। বিদেশি নাগরিক হত্যার মাধ্যমে বিএনপি তাদের হত্যার রাজনীতির দ্বিতীয় সংস্করণ শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ৯৩ দিন হরতাল-অবরোধ দিয়ে খালেদা জিয়া যেমন সরকার পতনে সফল হয়নি, তেমনি বিদেশি নাগরিক হত্যা করেও তার উদ্দেশ্য সফল হবে না।

দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা সুপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেছেন, এসব ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। কোনো ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলেন, যেই করুক, যারাই করুক এটি একটি ভয়ঙ্কর তৎপরতা। এই তৎপরতা চলতে থাকলে বিশ্বরাজনীতি তথা আন্তর্জাতিক শক্তির চাপে পড়তে হবে বাংলাদেশকে। এমন ইস্যু নিয়ে ছড়ি ঘোরানোর একটা পথ পেয়ে যাবে উন্নত বিশে^র দেশগুলো।

যেমন- চলে গেল অস্ট্রেলিয়া। খুবই অযৌক্তিক একটা কারণ দেখিয়ে একটা সিরিজ বাতিলের মতো সামর্থ্য এরই মাঝে এরা দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না। এরই মাঝে বিদেশি কূটনৈতিক মহলে খুনের ঘটনা আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে আরো সতর্ক অবস্থানে চলে গেছে। সামনেই একটি যুব বিশ^কাপের আয়োজক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরকম চললে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে সটকে পড়বে বেশ কিছু দেশ।

পর পর দু’জন বিদেশি নাগরিক খুন হবার কারণে বিদেশি পর্যটকরা অনেকেই সফর সংক্ষিপ্ত করে চলে গেছেন, অনেকে আগাম বুকিং বাতিল করেছেন। কক্সবাজারের হোটেল ওশেন প্যারাডাইসে সাউথ আফ্রিকার মহিলা ক্রিকেট দলের বুকিং ছিল ১৫ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। সেটা বাতিল হয়ে গেছে। হোটেল লংবিচে জাপানি নাগরিকদের নামে ৪৫টি রুম আগাম বুকিং দেয়া ছিল। একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালায় যোগ দিতে তাদের কক্সবাজার অবস্থানের কথা থাকলেও সে প্রোগ্রাম বাতিল করেছে তারা। বিদেশিদের অন্যতম আকর্ষণ পেঁচার দ্বীপে মারডেম ইকো রিসোর্টে বিদেশিদের যে সব বুকিং ছিল নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তা বাতিল করা হয়েছে। সেখানে এখন কোনো বিদেশি অবস্থান করছেন না।

যাহোক, হঠাৎ করেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ দৃশ্যত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বড় ধরনের অশান্তির সংকেত দেখা দিয়েছে। এর দায়দায়িত্ব কার দ্রুত সেটা নির্ণয় করা প্রয়োজন। যদিও এ দুই ঘটনার তদন্ত যেমন সহজ হবে না, তেমনি পাশ কাটানোরও সুযোগ নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে বিদেশিদের বক্তব্যদানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কাজেই এই তদন্ত তাদের কাছেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা যুক্তরাষ্ট্রসহ জাপান সরকার ও রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট।

সঠিক তদন্তের সঙ্গে প্রয়োজনে অভিজ্ঞ দেশগুলোর সহযোগিতাও নেওয়া যেতে পারে। কারণ, এই তদন্তের বিষয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ থাকবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশের। হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে না পারলে তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও ভাবমূর্তির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।