একুশে প্রতিবেদক : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি কার্যকরের শেষ মুহূর্তগুলোতে কী ঘটে, কেমন থাকে ফাঁসিতে ঝুলতে যাওয়া সংশ্লিষ্টদের মানসিক অবস্থা– এসব বিষয়ে সবারই কমবেশি কৌতূহল থাকে, থাকে টান টান উত্তেজনা।
গত ৭ মার্চ চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর রেলশ্রমিক ইউনিয়ন নেতা শফিউদ্দিন হত্যার দায়ে কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসি কার্যকর করা হয় শিপন হালদার (৩৫) ও নাইমুল ইসলাম ইমনের (৪৫)।
তাদের ফাঁসি কার্যকরের শেষ সময়গুলো কেমন ছিল তা জানতে পেরেছে একুশে পত্রিকা। ফাঁসি কার্যকরের সাথে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জেল কোডের ১০৩ বিধি অনুযায়ী, দন্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকরের সময় কুমিল্লা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান, সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ, সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। এদের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ফাঁসি কার্যকরের আগেই চলে যান। ১১টা ১৫ মিনিটে কারাগারে আসেন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ।
জানা যায়, এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করতে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে জল্লাদ আনা হয়। সূত্র মতে, গোসল করিয়ে ফাঁসির কক্ষে নিয়ে যাওয়া থেকে ফাঁসি কার্যকর হওয়া পর্যন্ত দুজনই বেশ শান্ত ছিল। দুজনের মুখ থেকে অবিরাম শোনা যাচ্ছিল কালেমা পড়ার শব্দ। ফাঁসির দড়ি টান দেওয়া পর্যন্ত কালেমা পড়ে গেছে দুজন।
সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে দণ্ডিত দুজনকে ১১ টা ৩০ মিনিটে আনা হয় ফাঁসির মঞ্চে। দুজনের ফাঁসি একইসাথে কার্যকরের জন্য সকল প্রস্তুতি নেওয়া ছিল আগে থেকেই। পাশাপাশি দুটি ২৫ দশমিক ৪ ডায়ামিটারের ম্যানিলা দড়ি ঝুলানো ছিল। মাথায় কালো কাপড় পরিয়ে মুখ ঢেকে তাদের তোলা হয় ফাঁসির কাষ্ঠে। এরপর গলায় পরানো হয় দড়ি। জেল সুপারের ইশারায় দায়িত্বরত জল্লাদ দড়ি টান দিতেই সরে যায় পায়ের নিচের পাটাতন, মুহূর্তেই ঝুলে পড়ে তারা।
এসময় প্রায় দশ মিনিট ধরে নড়াচড়া করছিল তাদের ভারবহন করা সেই দড়ি। এরপর সবকিছু নিস্তেজ। এরপরও জেল কোডের ১০০৬ বিধি অনুযায়ী ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখা হয় তাদের। মরদেহ নামিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার পেছনের অংশ কাটেন (আংশিক) দায়িত্বরত ডাক্তার। এরপর পৃথকভাবে দুজনের মরদেহ চারজন লোক ফাঁসির মঞ্চ বা কূপ থেকে বের করে আনেন। তারপর চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে লাশ দুটি মৃতের স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালের ১৪ জুন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর উত্তর আমবাগান রেলওয়ে কোয়ার্টারের ৩৬/এ বাসায় বাসায় ঢুকে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী-১ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী শফিউদ্দিনকে হত্যার দায়ে হত্যা মামলায় ফাসির আদেশ দেওয়া হয় চট্টগ্রাম নগরীর খুলশীর দক্ষিণ আমবাগানের শিপন হাওলাদার ও লালখানবাজার ডেবারপাড় এলাকার নাইমুল ইসলাম ইমনের।
শফিউদ্দিনকে হত্যার দায়ে খুলশী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী মাহমুদা বেগম। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ২৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল শিপন ও ইমনকে ফাঁসি, সাত আসামিকে যাবজ্জীবন এবং চারজনকে খালাস দেয়।
২০০৪ সাল থেকেই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই আসামি কারাগারে ছিলেন। প্রায় তিন বছর আগে তাদের কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। সাজার বিরুদ্ধে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলেও পরে পুনর্বিবেচনাও খারিজ করে দেয় আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হয়ে যায়। ফলে বহাল থাকে উচ্চ আদালতের ফাঁসির সাজা।