সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জ জেলার পাগলায় একটি সেতুর কাজের অনিয়মের ছবি ফেসবুকে শেয়ার দেওয়ায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রঞ্জিত সূত্রধরকে কুপিয়েছে ঠিকাদারের স্বজনেরা। স্থানীয় মসজিদে ঢুকেও রেহাই পাননি তিনি। সেখানেই রঞ্জিতকে এলোপাতাড়ি কুপিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলাবাজার এলাকার কান্দিগাঁও মসজিদে এ ঘটনা ঘটেছে। রঞ্জিতের রক্তে ভেসে গেছে মসজিদের মেঝে। গুরুতর আহত রনজিতকে (৩৫) আশংকাজনক অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, পশ্চিমপাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন গ্রামের মেস্তুর হাটের সামনে একটি সেতুর কাজ করেছিলেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু। সেই কাজের নিম্নমানের ছবি তুলে কয়েকদিন আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন স্থানীয় আইনজীবী রাধাকান্ত সুত্রধর। পোস্টটি শেয়ার করেন রঞ্জিত সুত্রধর। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে রঞ্জিত সূত্রধরকে কুপিয়েছে নিক্কু চেয়ারম্যানের লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের আহ্বায়ক মুনসুর আলম সুজনের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে সুজন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় আমি বাজারে ছিলাম। শোরগোল শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি মারামারি হচ্ছে। এসময় আমি তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করি। যারা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তারা আমার আত্মীয় বলে আমাকেও জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কান্দিগাঁও গ্রামের মসজিদের সাবেক মোতোয়াল্লী আব্দুন নূর বলেন, আল্লাহর ঘর মসজিদের ভেতরে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন তার উপর আক্রমণ করা, কুপিয়ে রক্তাক্ত করা খুবই জঘন্য কাজ।
পশ্চিম পাগলার বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল হক বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে স্বাধীন মতপ্রকাশের জায়গা। একজন নাগরিক যে কোনো বিষয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন। নিম্নমানের কাজের সমালোচনা করে দেয়া ফেইজবুক পোস্ট শেয়ারের অপরাধে মসজিদের ভেতর কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনা খুবই দুঃখজনক, নিন্দনীয়।
অভিযুক্ত ঠিকাদার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম আলম নিক্কু বলেন, রাধাকান্ত সূত্রধর আমার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্মিত একটি ব্রিজের কাজের অনিয়ম হয়েছে বলে ফেসবুকে একটি লেখা আপলোড করে। আমি তার সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। সে বলেছে আমার সম্পর্কে কিছু লেখেনি, এটি অন্য একজনকে ইঙ্গিত করেছে জানিয়ে সেটি ডিলিট করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু ঘটনার একদিন পর এই ইউপি সদস্য আমার নাম উল্লেখ করে দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে পোস্টটি শেয়ার করে। আমি থাকে বিষয়টি সরিয়ে ফেলার জন্য তাকে বার বার অনুরোধ করি। কিন্তু সে তা করেনি। ফলে মুহূর্তেই এটি এলাকায় ভাইরাল হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, আমার গোষ্ঠী অনেক বড়। আমার আত্মীয়দের মাঝে বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুপুরের দিকে দুই জন ছাত্রলীগকর্মী ও আমার ভাগ্নে পোস্টটি ডিলিট করার জন্যে তাকে (রঞ্জিতকে) পাগলা বাজারে অনুরোধ করে, কিন্তু রঞ্জিত এটি ডিলিট করেনি।
বিকেলের দিকে আমি ঘুমিয়েছিলাম, শুনলাম আমার গোষ্ঠীর মানুষ তাকে বাড়ি যাওয়ার পথে মসজিদে মারধর করেছে। আমাকে কেন্দ্র করে ঘটনাটি হওয়ায় আমি বিব্রত।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আল আমিন জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।