আগরতলা : একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার চিকিৎসা করাতে চেন্নাই যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১৪ ডিসেম্বর সকালে আখাউড়া স্থলবন্দরে যান। কাস্টমস, ইমিগ্রেশনসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি শূন্য রেখা অতিক্রম করে বেলা ১২টার দিকে আগরতলা ইমিগ্রেশনে আসেন। দুই ঘন্টায়ও সেখানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হচ্ছিল না।
অন্যদিকে একইদিন দুপুর আড়াইটায় আগরতলা বিমানবন্দর থেকে চেন্নাই যাওয়ার জন্য দুই সঙ্গীসহ টিকিট কেটে রাখেন সম্পাদক আজাদ তালুকদার। উপায়ান্তর না দেখে লম্বা লাইনের সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের অনুরোধ করে সামনে এগুতে চেষ্টা করেন তিনি। এতে কেউ রাজি হয়, কেউ হয় না।
কোনমতে কাউন্টারের সামনে যেতেই পাশে থাকা এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, এভাবে সবাইকে বলে সামনে আসার দরকার কী? আমাকে ২০০ রুপি দিলেই আমি ইমিগ্রেশন করে দিতাম!
সেদিনের ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে একুশে পত্রিকা সম্পাদক আজাদ তালুকদার বলেন, ‘আগরতলা স্থলবন্দরে এসে দেখি একজন নারী কর্মকর্তা ইমিগ্রেশনের কাজ করছেন। একটি মাত্র কাউন্টার। ওই কর্মকর্তা একজনের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় নিচ্ছেন। কাজ হচ্ছে না বলে একজনের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছিলেন বারবার করে।’
‘অনেক ভোগান্তির পর দুপুর ২টা ২০ মিনিটে আগরতলা ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করতে সক্ষম হই আমরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন আমাদের ফ্লাইট একঘন্টা দেরিতে ছাড়ে। যার কারণে জরিমানা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ফ্লাইটটি ধরতে সক্ষম হই আমরা।’
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজাদ তালুকদার বলেন, ‘যাত্রী হয়রানির বিষয়ে আগরতলা ইমিগ্রেশনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি কথা বলেছিলাম। তারা কর্মী সংকটের কথা বলে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে আখাউড়া রেলস্টেশন থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত। ওপারে ভারতের ত্রিপুরা। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা শহরেই অবস্থিত এই স্থলবন্দর।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতে প্রবেশের জন্য আখাউড়া-আগরতলা স্থলবন্দরের প্রতি বাংলাদেশিদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। চট্টগ্রাম, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী প্রভৃতি জেলার মানুষ এই বন্দর দিয়েই ভারতে প্রবেশ করেন। এখান থেকে দিল্লি, কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন শহরে যান তারা। তাই চাপ বাড়ছে ত্রিপুরার এই স্থলবন্দরে।
সেই হিসেবে আগরতলা স্থলবন্দরে সুযোগ সুবিধা বাড়েনি। এখন ত্রিপুরা পুলিশের বিশেষ শাখা ইমিগ্রেশনের দায়িত্ব সামলাচ্ছে৷ কিন্তু, কর্মী স্বল্পতা এবং অবকাঠামোর অভাবে যাত্রীরা ইমিগ্রেশনে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ত্রিপুরার আগরতলা থেকে কম ভাড়ায় ভারতের বিভিন্ন শহরে আকাশপথে যেতে পারেন সহজেই। রেলপথেও ত্রিপুরা এখন কলকাতা, দিল্লি বা চেন্নাইয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
যার কারণে বাংলাদেশিদের কাছে এখন এই স্থলবন্দর বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু আগরতলা স্থলবন্দরে গিয়ে যে হয়রানি ও ভোগান্তি হচ্ছে তাতে, দ্বিতীয়বার এই স্থলবন্দর ব্যবহার এড়িয়ে যেতে চাইবেন যাত্রীরা।
আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর ভারতে যাওয়া চট্টগ্রামের প্রাক্তন কাউন্সিলর রেহানা বেগম রানু বলেন, ‘আগরতলায় ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার কাজে খুবই ধীরগতি। একটি মাত্র কাউন্টার দেখলাম। যেখানে যাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাকে দেখে অনভিজ্ঞ মনে হয়েছে। ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে তিনি অনেক সময় নিচ্ছেন। সময়মতো ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে না পারায় অনেক বাংলাদেশি ফ্লাইট মিস করছেন।’
এ ধরনের ভোগান্তি এড়াতে ফ্লাইটের একদিন আগে ত্রিপুরায় আসার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আগরতলা স্থলবন্দরের সিনিয়র ইমিগ্রেশন অফিসার লালথাং একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে লজিস্টিক কম, জনবল কম, আমরা দ্রুত সেবা দিতে চাইলেও পারছি না।’ প্রতিদিন অনেক যাত্রীর ফ্লাইট মিস করার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
এদিকে আগরতলা আইসিপি-তে ইমিগ্রেশনে সমস্যা হচ্ছে- সে স্বীকার করেছেন স্বয়ং ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান আদিত্য মিশ্র। সম্প্রতি আগরতলা আইসিপি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগরতলা আইসিপি-তে ইমিগ্রেশনে সমস্যা হচ্ছে। তাই, ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন শীঘ্রই দায়িত্ব বুঝে নেবে৷ ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন দায়িত্ব নিলে ইমিগ্রেশনের জন্য কাউন্টার বাড়বে৷ এতে যাত্রীদের অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না।’