:: আজাদ তালুকদার ::
আইয়ান দুই বছরের ফুটফুটে শিশু। বাবা-মায়ের সঙ্গে চেম্বারে ঢুকেই অস্থির। মা থামানোর চেষ্টা করছিলেন কিন্তু সে ফিরেও তাকায় না, যেন কানে কিছুই শুনছে না। ডাক্তার বললেন, ওকে ওর মতো থাকতে দিন, বলুন ছেলের কী সমস্যা। বাবা-মা খুবই উদ্বেগের সঙ্গে শুরু করলেন-
তাদের প্রথম সন্তান আইয়ান- কথা বলে না, আগে যা একটু বলতো এখন তাও বলে না; সবসময় অস্থির, চঞ্চল; যা পাই তা দিয়ে একা-একা খেলে, ভেঙে ফেলে অনেক কিছুই; নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না কিন্তু টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের শব্দ শুনলেই দৌড়ে যায়, অকারণে চিৎকার চেচামেচি করে, শরীরের এমন সব অঙ্গভঙ্গি করে যা তার সমবয়সী বচ্চাদের মত না।
মায়ের প্রশ্ন আইয়ানের আসলে কী হয়েছে?
কেউ বলে প্রতিবন্ধী, কেউ বলে অটিজম। আচ্ছা, অটিজমটা কী? এর কারণ কী? কেন হলো? সন্তানের এই অবস্থার জন্য মা কি দায়ী? যদি অটিজমই হয়ে থাকে এই সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবো? কী করবো? সে সুস্থ স্বাভাবিক হবে তো? দেশে-বিদেশে এর কি কোনো চিকিৎসা আছে? ইত্যাদি প্রশ্ন করতে করতে
করতে মা অঝোরে কাঁদতে লাগলেন।
এবার আসুন বোঝার চেষ্টা করি- অটিজম কী?
অটিজম এবং প্রতিবন্ধী কখনোই এক নয়। অটিজম হচ্ছে শিশুর বিকাশজনিত একটি সমস্যা। এই বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের সামাজিক যোগাযোগ ও সঠিক ভাষা প্রয়োগে সমস্যা হয়ে থাকে।
অটিজম শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ আউটোস থেকে। অর্থাৎ আত্ম বা নিজ। বিশেষ ধরনের স্নায়বিক (ডিসঅর্ডার অব নিউরাল ডেভেলপমেন্ট) সমস্যাই হলো অটিজম। অটিস্টরা আমাদের চারপাশের জগত থেকে নিজেদের কিছুটা আড়াল করে রাখে। তাদের নিজস্ব একটা মনোজগতে বসবাস করে। ফলে অনেক সময় এদের আচরণও হয় অস্বাভাবিক। সহজ করে বলতে গেলে এই ধরনের রোগীকে সাধারণত হাবাগোবা বলেই চালিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ ক্ষেত্রে তাদেরকে মানসিক রোগী বলা যাবে না। আচরণগত সমস্যা হিসেবে মানিয়ে নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজম একটি মানসিক বিকাশগত সমস্যা যা সাধারণত জন্মের পর প্রথম তিন বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। এই সমস্যার জন্য সামাজিক বিকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ যেমন কথা বলা, ভাববিনিময় করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তীব্র আলো, শব্দ, গন্ধ এসব সহ্য করতে পারে না অটিস্টরা। মানুষের সঙ্গে, এমনকি আপনজনের সঙ্গেও ভাববিনিময় করতে পারে না।
১৯১১ সালে সর্বপ্রথম সুইস মনোবিজ্ঞানী অয়গেন ব্লয়লার অটিজমকে একধরনের মনোরোগ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কয়েক দশক পরে রোগটি নিয়ে গবেষণা আরো বিস্তৃত হয়। অটিজম মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক বায়োলজি ও কেমিস্ট্রির ফলে সৃষ্ট একটি সমস্যা। তবে ঠিক কী কারণে অটিজম হয় এ ব্যাপারে এখনো কোনো সুস্পষ্ট কারণ জানা যায়নি। সারা পৃথিবীতেই এই সমস্যার কারণ জানতে গবেষণা চলছে।
বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ মনে করে থাকেন জিনগত ত্রুটির কারণে অটিজম হতে পারে। যেমন কোনো পরিবারে যদি অটিজমের ইতিহাস থাকে তাহলে সেই পরিবারের শিশুটির অটিজম হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেশি।
এছাড়া অটিজমের জন্য আরো কিছু বিষয়কে সন্দেহ করা হয়, এগুলো হচ্ছে গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাস, বাচ্চার অন্ত্রের পরিবর্তনগত সমস্যা, মার্কারির (পারদ) বিষক্রিয়া, বাচ্চার ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ পরিপাক করতে না পারা, টীকার প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
চিকিৎসকদের বক্তব্য, অটিজমের প্রাথমিক লক্ষণগুলো বাবা-মায়েরা সচেতন থাকলে চিহ্নিত করতে পারবেন। যেমন- ১২ মাস বয়সের মধ্যে মুখে আধো বোল না ফুটলে, পছন্দের কোনো জিনিসের দিকে শিশু ইশারা না করলে, ১৬ মাসের মধ্যে একটিও পূর্ণ শব্দ বলতে না পারলে, ২৪ মাস বয়সের মধ্যে অন্তত দুটি শব্দ দিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারলে, ভাষার ব্যবহার রপ্ত করার পর আবার ভুলে গেলে এবং বয়সের উপযোগী সামাজিক আচরণ করতে ব্যর্থ হলে অটিজমের সমস্যা আছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
শিশুর অটিজম শণাক্ত করতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল করতে হবে। যেমনÑ একই আচরণ বারবার করা, চোখে চোখ না রেখে তাকানো, আনন্দের বিষয়ে আনন্দ না পাওয়া বা নির্বিকার থাকা, পছন্দের বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা না বলা, পরিবেশ অনুযায়ী মুখভঙ্গির পরিবর্তন না করা, সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে না পারা ইত্যাদি। সাধারণত তিন বছর বয়সের দিকে এ লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
বাচ্চা অটিস্টিক কিনা তা যাচাইয়ের জন্য কোনো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট নেই। তবে এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বাচ্চার আচরণ, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি বিবেচনা করে বাচ্চা অটিস্টিক কিনা তা বলতে পারেন। অটিজম এমন একটি কন্ডিশন যা কখনো পুরোপুরি ভালো হবার নয়। এটাকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হয়। দ্রুত নির্ণয় করা গেলে অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অটিজমের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা কিংবা ওষুধ নেই। একটি শিশুকে দ্রুত সঠিক শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের কিছুটা রোগমুক্ত করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক বা পরিচর্যাকারী।
জানা যায়, প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর জন্য একজন করে প্রশিক্ষক প্রয়োজন। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষক এখানে না থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই পালা করে প্রশিক্ষণ দিতে হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রশিক্ষককে পর্যাপ্ত সম্মানী ভাতা দিতেও হিমশিম খেতে হয় স্কুল সংশ্লিষ্টদের। অপরদিকে, দেশের বাইরে থেকে প্রশিক্ষক আনাও ব্যয়বহুল। এ অবস্থায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
অটিজম অয়েলফেয়ার ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের কারিগরি শাখা সূত্রে জানা গেছে, নিবিড় যতœ ও পরিচর্যায় অনেক শিশু চার থেকে ছয় বছর বয়সের মধ্যে তাদের সীমাবদ্ধতাগুলো একটু করে কমিয়ে আনতে পারে ও একসময় স্বাভাবিক শিশুদের সাথে পড়ালেখা করতে পারে। আরো ১০-২০% শিশু স্বাভাবিক শিশুদের সাথে পড়তে পারে না। এদের কারো জন্য প্রয়োজন হয় বিশেষায়িত স্কুল ও বিশেষ প্রশিক্ষণের। বিশেষায়িত স্কুলে পড়ে, ভাষাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের পক্ষে সমাজে মোটামুটি স্বনির্ভর একটা স্থান করে নেয়া সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বাদবাকি প্রায় ৬০% অটিস্টিক শিশু, সবধরনের সহায়তা পাওয়ার পরও স্বাধীন, স্বনির্ভর ও এককভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে না।
অটিজম বিশেষজ্ঞ কয়েকজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মানসম্পন্ন অকুপেশনাল থেরাপি মিউজিয়াম, আরলি ইন্টারভেনশনাল সেন্টার, কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র ও আবাসিক ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক সময় অটিস্টিক শিশুদের মানসিক অবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হয়। অটিজমের সঙ্গে বিকাশগত অক্ষমতা ও নিউরো বায়োলজিক্যাল ডিজঅর্ডার জড়িত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাইকোথেরাপী বা অন্যকিছুও এই রোগ থেকে শিশুকে মুক্তি দিতে পারে না। শিশুরা মাতৃগর্ভেই অটিজমে আক্রান্ত হয়। এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা পরিবেশগত বিষক্রিয়া বা দূষণ এবং বংশগত প্রভাবের কথা বলছেন।
ঢাকার শিশু হাসপাতাল এবং চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের শিশুবিকাশ কেন্দ্রে অটিজম বিষয়ের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকায় ডা. রওনক হাফিজ, ডা. লিলি হক ও ডা. মল্লিক এবং চট্টগ্রামে ডা. বাসনা মুহুরী অটিজম নিয়ে কাজ করছেন। ঢাকায় অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, এসডব্লিউএসি (সোয়াক), কেয়ারিং গ্লোরি, বিউটিফুল মাইন্ডসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করছে।
অটিজমের প্রকারভেদ
অটিজমের কয়েকটি ধরন রয়েছে। এর মধ্যে ক্লাসিক অটিস্টিক ডিসঅর্ডার। যাকে আর্লি ইনফ্যানটাইল অটিজমও বলা হয়। সাধারণত তিন বছর বয়স হওয়ার আগেই এর লক্ষণ দেখা যায়। এতে শিশুর বিকাশে এক সঙ্গে অনেকগুলো প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। যেমন কথা বলার সমস্যা, যোগাযোগ ও বোঝার অসুবিধা ইত্যাদি।
আরেক প্রকারের অটিজম হলো অ্যাসপারজার্স সিনড্রোম। এ ক্ষেত্রে রোগীর স্বাভাবিক কথা বলার ক্ষমতা থাকলেও কারো সঙ্গে মিশতে পছন্দ করে না। বিশেষ কোনো একটি বিষয়ে পারদর্শী হয়, কিন্তু অন্য আরেকটি বিষয়ে কিছুই বুঝতে পারে না।
তবে অটিজম আক্রান্তদের মধ্যে কিছু বিষয়ে বেশ মিল দেখা যায়। তারা সবাই একই ধরনের আচরণ বার বার করে এবং সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। হঠাৎ রেগে যায়।
দেশে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা ৩৯৮৮৩
বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৩০ প্রতিবন্ধী শণাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুর সংখ্যা ৩৯ হাজার ৮৮৩ জন। শতকরা হিসাবে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ ভাগ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু। সরকার পরিচালিত এক জরিপ থেকে গত ১৫ ফেব্রুযারি পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের এ সংখ্যা পাওয়া যায়।
জরিপ অনুযায়ী, মোট অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শণাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এ বিভাগে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ১১ হাজার ৬৯৫ শিশু শণাক্ত হয়েছে। এর পরেই ঢাকা বিভাগে আছে ৮ হাজার ৮০৬ শিশু। অন্যান্য বিভাগের মধ্যে রংপুরে ৪ হাজার ৬৩২ জন, খুলনায় ৪ হাজার ১০ জন, রাজশাহীতে ৩ হাজার ৮৭৫ জন, সিলেটে ২ হাজার ৪৭০ জন, ময়মনসিংহে ২ হাজার ৩৬৭ জন ও বরিশালে ২ হাজার ২৮ জন।
এক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় বেশি ঝুঁকিসম্পন্ন বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। এর অনুপাত ৪:৩:১। বয়স্ক পিতা অটিজম হওয়ার জন্য বেশি দায়ী বয়স্ক মায়ের তুলনায়। কারণ বেশি বয়স্ক স্পার্ম দিয়ে মিউটেশন কঠিন হয়। অটিজম সাধারণত সকল জাতি, বর্ণ, গোত্র ও দেশে দেখা যায়।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক শতাংশ মানুষ অটিজম আক্রান্ত এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৬৮ শিশুর মধ্যে একজন অটিস্টিক। যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিশেষজ্ঞ এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক সমীক্ষায় দেখেন যে, ৪০ বছর বয়সী মায়ের অটিস্টিক শিশু হওয়ার সম্ভাবনা ২৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী মায়ের তুলনায় ৫০ ভাগ। সমীক্ষায় তারা আরো দেখেন যে, প্রতি ১০ হাজার শিশুর মধ্যে ৫ জনের এমন রোগ হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রোগে আক্রান্ত ছেলে শিশুর সংখ্যা মেয়ে শিশুর তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি।
যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় দেখা যায়, বেশিরভাগ অটিস্টিক শিশু অত্যন্ত সম্ভাবনাময় হয়। প্রতি ১০ অটিস্টিক শিশুর মধ্যে ১ জনের ভিতর প্রচ- দক্ষতা দেখা যায় ছবি আঁকা, গানে কিংবা গণিতে বা কম্পিউটার পরিচালনায়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষকের মতে, আমেরিকায় শিশুদের প্রতি ১৫০ জনে একজন এবং অস্ট্রেলিয়ায় ১৬০ জনে একজন শিশু অটিজম আক্রান্ত। যাদের অধিকাংশই গণিত বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে জিনিয়াস হওয়া দূরে থাক, খুব সাধারণ দৈনন্দিন কাজকর্মেও অন্যের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তারা আরো বলেন, অটিস্টিকদের কেউ কেউ হয়তো বিশেষ পরিস্থিতিতে খুব ভাল আইকিউ স্কোর করতে পারে অথবা বিশেষ কোনো কাজে দক্ষতা দেখাতে পারে, কিন্তু এটা নিছকই ব্যতিক্রম।
অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। অটিজম মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণের জন্য বাংলাদেশ, ভারত, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মিশন এবং অটিজম স্পিকস যৌথভাবে এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
মূলত ২০১১ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনের মধ্যদিয়ে অটিজম সচেতনতা ও সেবা নিয়ে বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয়। বর্তমানে অটিজম বিষয়ক জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি, জাতীয় পরামর্শক কমিটি এবং কারিগরি নির্দেশক কমিটির মাধ্যমে সমন্বিতভাবে অটিজম সচেতনতা, দ্রুত চিহ্নিতকরণ, সেবা ও পুনর্বাসনে কাজ চলছে। এজন্য ১৩টি মন্ত্রণালয় একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশে অটিজম সচেতনতা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণার জন্য ৫ বছর মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অটিস্টিক শিশুর মা-বাবার ক্ষমতায়ন, নীতি ও আইনি কাঠামো চিহ্নিতকরণ, সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও অভিভাবকের সমন্বয়, দক্ষ পেশাজীবী গড়ে তোলা ও অধিকতর প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের সামর্থ্য বাড়ানো, প্রচলিত জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণে অটিজমকে সম্পৃক্ত করা, দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও গবেষণাÑ এই ৭টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছয় স্তরে কর্মসূচি গ্রহণ করে কাজ চলছে, যেখানে কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যবসা-শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সেন্টার ফর নিউরো ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন সেন্টার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগ এবং অটিস্টিকদের জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে। কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, চিকিৎসক, সেবাদানকারী ও মা-বাবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে বিনামূল্যে ফিজিওথেরাপি ও অন্যান্য চিকিৎসা দিতে দেশের ৬৪ জেলায় ১০৩টি সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে, ভবিষ্যতে এ সংখ্যা আরও বাড়ানোর অঙ্গীকার রয়েছে বাংলাদেশ সরকারের। এছাড়া অটিস্টিক শিশুকে মূলধারায় আনতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিশেষ একাডেমি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বলা বাহুল্য, অটিস্টিকদের জন্য ব্যাপক কর্মযজ্ঞের সবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের একাগ্রতার কারণে।
অটিস্টিক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা দিতে মিরপুরের জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন চত্ত্বরে অটিজম রিসোর্স সেন্টার চালু করা হয়েছে। অটিস্টিকদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চিত্রকর্ম প্রদর্শনীসহ তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্পত্তিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিশ্চিত এবং অভিভাবকহীন প্রতিবন্ধীর রাষ্ট্রীয় সেবায় বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন এবং নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন করার কথা ভাবছে সরকার। প্রতিবন্ধী শিশুদের বিদ্যালয়ে ভর্তি ও তাদের সুবিধামতো অবকাঠামোগত পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। উপবৃত্তি সুবিধাভোগীর সংখ্যা এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে, ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সারাদেশে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হাতে নেয়া হচ্ছে। এজন্য দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল খোলা হবে। যথাযথভাবে অটিস্টিক শিশুদের চিকিসা প্রদানে এই বিভাগীয় শহরগুলোতে নির্মাণ করা হবে আধুনিক ডায়াগনোসিস সেন্টার ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। অটিস্টিক শিশুদের মানসিক বিকার কমিয়ে আনতে থাকবে রিসার্স সেন্টার। তাছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে অটিস্টিক শিশুদের সংখ্যা নির্ধারণেও সরকারিভাবে কাজ করা হচ্ছে।
অটিস্টিক : প্রেক্ষিত চট্টগ্রাম
অটিস্টিক শিশুদের স্বাবলম্বী করার জন্য চট্টগ্রামে কোনো আলাদা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ফলে অটিজমে আক্রান্ত ১৫ বছরের বেশি বয়সীরা উপযুক্ত কারিগরি শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কাক্সিক্ষত উদ্যোগের অভাবে অভিভাবকহীন অটিস্টিক শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। চট্টগ্রামে অটিস্টিক শিশুর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, অনেক পরিবার বিষয়টি প্রকাশ করতে চায় না। আবার কেউ কেউ আর্থিক সামর্থ্যরে অভাবে শিশুদের প্রশিক্ষণকেন্দ্রে পাঠাতে চান না। ফলে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের সঠিক হিসাব পাওয়া কঠিন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাসনা মুহুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে অটিস্টিক শিশুর সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ২০০ জন অটিস্টিক শিশুর অভিভাবকের নাম তালিকাভুক্ত আছে। কিন্তু এখন আমরা প্রায়ই কয়েকজন করে নতুন অটিস্টিক শিশুর খোঁজ পাচ্ছি। সে হিসাবে বলা যায়, এই সংখ্যা ৫০০-এর কাছাকাছি হবে।’
জানা যায়, চট্টগ্রামে অটিস্টিক শিশুদের জন্য ১৪টি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুল পরিচালনা, প্রশিক্ষণের সঙ্গে সাধারণত সংশ্লিষ্ট শিশুদের বাবা-মা কিংবা পরিবারের সদস্যরা জড়িত। এ প্রসঙ্গে অটিস্টিক চিলড্রেন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন কুমার দাশ বলেন, ‘অটিস্টিক শিশুদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু স্কুলগুলোতে প্রশিক্ষণের খরচ মেটাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। দুই দিনের জন্য বাইরে থেকে প্রশিক্ষক আনতে আমাদের প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ পড়ছে। এ অবস্থায় অটিস্টিক স্কুলগুলোকে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করা হলে আমাদের বেশ উপকার হয়।’
চট্টগ্রামে অটিস্টিক শিশুদের শতকরা প্রায় ২৫ জনের বয়স ১৫ বছরের ওপরে। এদেরকে স্কুলের অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাখাও নিরাপদ নয়। এদের জন্য দরকার আলাদা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো গড়ে ওঠেনি চট্টগ্রামের কোথাও। দু-একটি অটিস্টিক স্কুলে বিক্ষিপ্তভাবে দু-একজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সুইড বাংলাদেশ অটিস্টিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামীম আহমেদ বলেন, ‘আমরা যদি চট্টগ্রামে ৫০০ অটিস্টিক শিশু আছে ধরে নিই, তাহলে ১২৫ জনের বয়স হবে ১৫ বছরের ওপরে। আমরা এ রকম পাঁচজন অটিজম আক্রান্তকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এদের বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া গেলে তারা স্বাবলম্বী হতে শিখবে।’
অটিস্টিক চিলড্রেন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার সেন্টার চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ঝুলন কুমার দাশ বলেন, ‘আমরা রেলওয়ে ও সরকারের খাসজমির জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি। জায়গা পেলে আমরা অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারতাম।’
অটিজমের বিরুদ্ধে পুতুলের যুদ্ধ
বাংলাদেশে অটিজমের প্রসঙ্গ এলেই যার কথা এ মুহূর্ত্বে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নেতৃত্বে ও প্রচেষ্টায় অটিস্টিকদের সেবা ও পুনর্বাসনে নিরলস কাজ করছে বাংলাদেশ।
তিনি অটিজম বিষয়ক বাংলাদেশ জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান। সায়মা ওয়াজেদ শিশুদের অটিজম বিষয়ে একজন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রবক্তা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৭ সালে মনোবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি, ২০০২ সালে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি এবং ২০০৪ সালে স্কুল সাইকোলজির ওপর বিশেষজ্ঞ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় তিনি বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নের ওপর গবেষণা করেন। এ বিষয়ে তার গবেষণাকর্ম ফ্লোরিডার একাডেমি অব সায়েন্স কর্তৃক শ্রেষ্ঠ সায়েন্টিফিক উপস্থাপনা হিসেবে স্বীকৃত হয়।
সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল ২০০৮ সাল থেকে শিশুদের অটিজম এবং স্নায়বিক জটিলতা সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁর কাজ বিশ্বজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অটিজম স্পিকস-এর পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন। তিনি ২০১৩ সালের জুন থেকে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে অন্তর্ভুক্ত আছেন। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইয়ে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তা দেওয়ার জন্য অবকাঠামো গড়তে কাজ করছে। তাঁর উদ্যোগেই অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
পুতুল বলেন- ‘মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করাই আমার দায়িত্ব’। সে দায়িত্ব তিনি পালন করে যাচ্ছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। সেই নিষ্ঠারই একটি ক্ষুদ্র অর্জন ব্যারি ইউনিভার্সিটির প্রদত্ত সম্মাননা। অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটি ডিসটিংগুইসড অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলকে।
পুতুল বলেন, অটিস্টিক জনগোষ্ঠীকে বিশ্বের মূলধারার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকা-ে যুক্ত করার লক্ষ্যে তাদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও সেবা দিয়ে কর্মোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিশ্বের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
বিশ্বে অটিজম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাঁর অভিমত হলো, সহযোগিতার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিতের উদ্যোগ, অটিস্টিকদের জীবনের পুরোটা সময় সেবা নিশ্চিতের উদ্যোগ, দেশভিত্তিক বহু খাত ও স্তরভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, টেকসই ও সাশ্রয়ী কর্মকৌশল বাস্তবায়ন এবং বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, সামাজিক সেবাসহ প্রতিটি খাতে অটিস্টিকদের অধিকতর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের পাশাপাশি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল।
তাঁর মতে, উন্নয়নশীল দেশে অটিস্টিকদের জন্য কাজ করা খুব সহজ নয়। এর জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে অনেক। এসব দেশে অটিজম মোকাবিলায় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও সীমিত সেবা, সেবাদানকারীদের মানসম্পন্ন প্রশিক্ষণের অভাব এবং অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন পুতুল। তবে এসব চ্যালেঞ্জ ক্রমশ কেটে যাচ্ছে বলেও মনে করেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য সায়মা।
মূলত বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার হিসেবে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল জাতির জনকের চিন্তা ও আদর্শ ধারণ করে মানবতার কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। অটিজম শিশুর বেদনা ওই শিশু ও তার পিতামাতা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে অনুভব করা সম্ভব নয়। সন্তানের এধরনের সমস্যা নিয়ে পিতা-মাতা দিনরাত চিন্তিত থাকেন। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সকল অটিজম শিশুর জীবনযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠে বিকশিত জীবনের দিকে এগিয়ে নেয়ার যে প্রত্যয় ও প্রচেষ্টা নিয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল তা প্রশংসার দাবিদার।
জাতিসংঘে অটিজম নিয়ে সায়মা ওয়াজেদের ভাষণ
জাতিসংঘের মূল প্রবন্ধে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেছেন, অটিজম মোকাবিলায় যথেষ্ট জোর দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ২ এপ্রিল নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিল সেন্টারে আয়োজিত এক আলোচনার মূল প্রবন্ধে পুতুল এ মন্তব্য করেন।
সায়মা হোসেন পুতুল বলেন, অটিজমের বিষয়ে জাতীয় পর্যায়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ যা কাজ করেছে, তা গর্ব করার মতো। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ মডেল অনন্য। নানা ক্ষেত্রে নানামুখী কাজ হচ্ছে সেখানে। এটা সম্ভব হয়েছে রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং সংশ্লিষ্টদের ইতিবাচক মনোভাবের কারণে।
সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাতীয় উন্নয়নে অটিজম আক্রান্তদের সম্পৃক্ত করতে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীকন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অটিজম ও অন্যান্য এনডিডি আক্রান্তদের জন্য পুরো এক পৃষ্ঠা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সায়মা আরও বলেন, আর্লি চাইল্ডহুড সেন্টারগুলোতে অন্তত ২ জন প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল অটিজম অ্যান্ড এনডিডি একাডেমি স্থাপন করেছে। জাতীয় পর্যায়ের নাটক, সিনেমা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে অটিজম আক্রান্তদের সুযোগ দেওয়ারও একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সায়মা ১২ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতে প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় তার মা শেখ হাসিনার অবদানকে বিশেষভাবে স্মরণ করেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে জানিয়ে তিনি প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি জানান, ’৯০ দশকের মাঝামাঝি বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সর্বপ্রথম জাতীয় নীতি নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য ন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়, যা পরে জেপিইউএফ-এ পরিণত হয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় প্রথম আইন প্রণয়ন ও আন্তঃমন্ত্রণালয় টাস্কফোর্স গঠন করে। এছাড়া অটিজমসহ এনডিডি (নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার) আক্রান্তদের চিকিৎসাসহ যাবতীয় অধিকারের সুরক্ষা আইনের আওতায় আনতে ২০১৩ সালে ডিজঅ্যাবিলিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাক্ট ও দ্যা ন্যাশনাল নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার প্রটেকশন ট্রাস্ট অ্যাক্ট করা হয়।
প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করা অল্পকটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম উল্লেখ করে সায়মা বলেন, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অটিজম সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা সম্মেলনের ঘোষণা অনুযায়ী সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক গঠিত হয়, যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের সমাজের অংশ বলে গণ্য করার জোর প্রচার চলছে। অটিজমে আক্রান্তসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের আর্থসামাজিক
প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় তাদেরকে পরিবার ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যে রেজ্যুলেশন গৃহীত হয় তাও বাংলাদেশ উত্থাপন করেছিল বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে অটিজম নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নয়নশীল দেশে এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ ও কর্মতৎপরতা কী হতে পারে, তা তুলে ধরেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অটিজম আক্রান্ত শিশুরাও এই সমাজের অংশ এবং তাদেরও সব পর্যায়ে সমান অধিকার থাকার বিষয়টি যত বেশি সংখ্যক মানুষ বুঝতে পারছেন, সমস্যাটি ততই হালকা হয়ে আসছে বলে মনে করেন তিনি।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি আলইয়া আহমেদ সাইফ আল-থান, যুক্তরাষ্ট্রের সারাহ মেন্ডেলসন, ভারতের সাঈদ আকবর উদ্দিন ও অটিজম স্পিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা সুজান রাইট। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ শামীম আহসানসহ বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এক্সিলেন্স ইন পাবলিক হেলথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত সায়মা ওয়াজেদ পুতুল
অটিজম আন্দোলন ও বিশ্বস্বাস্থ্যে অবদান রেখে সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেছেন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অটিজম নিয়ে পুতুলের কার্যক্রম বিশ্বজুড়েই প্রশংসা কুড়ায়। তারই ধারাবাহিকতায় অটিজম নিয়ে কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৪ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও বা হু) এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন। সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম ক্ষেত্রপাল সিংয়ের উদ্যোগে এই অঞ্চলের ১১টি দেশের জন্য ২০১৪ থেকেই এ পুরস্কার চালু করা হয়েছে। এর আওতায় জনস্বাস্থ্যে অবদানের জন্য প্রতিবছর একজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হবে। মনস্তত্ত্ববিদ সায়মা ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘অটিজম স্পিকস’র পরামর্শক
হিসেবেও কাজ করেন। তিনি গত জুনে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ‘বিশেষজ্ঞ পরামর্শক প্যানেলে’ অন্তর্ভুক্ত হন। পুতুলের উদ্যোগেই ২০১১ সালের জুলাইতে ঢাকায় অটিজম নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনের পর গড়ে ওঠে সাউথ এশিয়ান অটিজম নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের স্বাস্থ্য, সামাজিক ও শিক্ষা সহায়তা দেওয়ার জন্য অবকাঠামো গড়তে কাজ করছে। পুতুলের উদ্যোগেই অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
জনস্বাস্থ্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি প্রদানে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ড. ক্ষেত্রপাল সিং-এর পরামর্শ অনুযায়ী নতুন এই পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়। সর্বপ্রথম যে দু’টি পুরস্কার দেওয়া হয়, তার একটি অর্জন করলেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। প্রাতিষ্ঠানিক ক্যাটাগরিতে পূর্ব তিমুরের ন্যাশনাল ম্যালেরিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনএমসিপি)-এর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। এ জন্য ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিং পূর্ব তিমুরের স্বাস্থ্যমন্ত্রী লেস্টে ড. সার্গিও লোবোকেও সম্মাননা প্রদান করেন। সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল তার এ পুরস্কার অটিজম ডিসঅর্ডারস-এর সঙ্গে বসবাসরত পরিবারগুলোর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।
এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পাওয়ায় সায়মা ওয়াজেদকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, অটিজম নিয়ে নিজের কাজের মধ্য দিয়েই তার এই ‘অসাধারণ অর্জন’। এর মধ্য দিয়ে সায়মা হোসেন মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্তদের বিষয়টিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছেন।
পুরস্কার দেওয়ার আগে ক্ষেত্রপাল এক বিবৃতিতে সায়মা হোসেনকে অটিজমবিষয়ক কর্মকা-ে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ‘মূল চালিকাশক্তি’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বে এবং এই অঞ্চলে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে বাংলাদেশ যে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তার মূল চালিকাশক্তি পুতুল। শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজে বহুমুখী অংশীদারিত্ব তৈরিতে তার কর্মকা- সহায়তা করেছে। তার এই ভূমিকার কারণেই জাতিসংঘ এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থায় এসব ক্ষেত্রে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।’
পুতুলের কাজের প্রশংসা করেছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক মারগারেট চ্যান। তিনি বলেন, ‘কারিগরি দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের মাধ্যমে বিশ্বকে তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্র সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি তাকে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা প্যানেলের বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
এছাড়া ডব্লিউএইচও’র মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সংস্থাটির মহাপরিচালক মার্গারেট চ্যান চার বছরের জন্য তাকে এই দায়িত্ব দেন।
জানা যায়, অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুতুল যে সংগ্রাম করছেন, তারই ধারাবাহিকতায় এ দায়িত্ব পান। বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য হিসেবে তিনি শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও কাজের ক্ষেত্র থেকে বিশ্বস্বাস্থ্যকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে এই সামাজিক দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি কোনো সম্মানী বা ভাতা নিচ্ছেন না। পুতুলেরই উদ্যোগে এর আগে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সম্মেলনে অটিজম নিয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাব পাস হয়। সেটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটি বিরাট অর্জন। এর ফলে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে আক্রান্তরা পুরো বিশ্বের মনোযোগে আসে বলে ধারণা করা হয়। আর অটিজম-সংক্রান্ত বাংলাদেশের কার্যক্রমও বিশ্বের কাছে মডেল হিসেবে বিবেচিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
পুতুলের এ লড়াইয়ের অংশ হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনেও অটিজমবিষয়ক বাংলাদেশের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। সংস্থার ১৯৩টি সদস্য দেশের সম্মতিতে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়। তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো, জাতিসংঘে অটিজম নিয়ে এর আগে কখনো কোনো প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। সেদিক বিবেচনা করে বিশ্বে অটিজম আন্দোলনে বাংলাদেশ অগ্রপথিক হয়ে থাকবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিশ্বদরবারে অটিজম আন্দোলনকে তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে ও অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের অবদান অতুলনীয়। বাংলাদেশের প্রস্তাব গ্রহণের ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের দেশের অটিস্টিক শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করবে। একই সঙ্গে প্রতিটি দেশ তাদের দেশে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের পরিসংখ্যান তৈরি করবে। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভিত্তিতে তাদের পুনর্বাসনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।