চট্টগ্রাম: ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশের গুলিবর্ষণের মামলায় সাক্ষি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর রুহুল আমিনের আদালতে সাক্ষ্য দেন এই সমাজ বিজ্ঞানী।
ড. অনুপম সেন সাক্ষ্যে বলেন, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আনুমানিক বেলা ১টার দিকে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকটি আদালত ভবনের দিকে আসার সময় গুলিবর্ষণ শুরু হয়। গুলিবর্ষণের পর আইনজীবীরা মানব বেষ্টনি তৈরির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে রক্ষা করে তাকে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিয়ে গিয়েছিলাম। গুলি বর্ষণের সময় বিভিন্নজনকে গুলি খেয়ে আমি কাতরাতে দেখেছি। অনেককে প্রাণরক্ষার চেষ্টা করতেও দেখেছি। পরে শুনেছি, গুলিতে মোট ২৪ জন মারা গেছেন। গুলিতে নিহতদের কারও লাশ পরিবারকে নিতে দেয়নি তৎকালীন সরকার। হিন্দু-মুসলিম নির্বিচারে সবাইকে বলুয়ার দীঘি শ্মশানে পুড়ে ফেলা হয়।
বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি মেজবাহ উদ্দিন জানান, ২৮ বছর আগের মামলাটি তিন মাস আগে বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর হয়। এরপর আদালত গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও ড. অনুপম সেনসহ ছয়জনকে সাক্ষ্য দিতে সমন জারি করে। তবে রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় মন্ত্রী মোশাররফ আসতে পারেননি। আদালত আগামী ২৬ জুন মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন।
প্রসঙ্গত ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামের লালদিঘীতে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে ২৪জন নিহত ও কমপক্ষে দুইশ মানুষ আহত হন। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাকে প্রধান করে মোট ৪৯ জনকে আসামি করা হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মামলাটি সচল হয়। ১৯৯৮ সালের ১৪ মে ৪৭জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেয়। এরপর ১৯৯৯ সালের ১৪ অক্টোবর সাতজনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার কাদের খান।
এতে আসামি করা হয়- কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল ওরফে জে সি মন্ডল, কনস্টেবল মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়–য়া, মমতাজ উদ্দিন, শাহ মোঃ আব্দুল্লাহ, বশির উদ্দিন। মামলার বাদী শহীদুল হুদা ও তদন্ত কর্মকর্তা কাদের খান ইতোমধ্যে মারা গেছেন। আসামিদের মধ্যে বশির মারা গেছেন। আসামি জে সি মন্ডল রয়েছেন পলাতক। অন্যরা উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছেন।
###শরীফুল রুকন/২৬-০৫-২০১৬।