সৈয়্যেদা ফাতেমা পিঙ্কী : থানায় স্বামীর অভিযোগ, তিনি বাড়িতে ছিলেন না, রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে তার স্ত্রী বসতঘরের লাগোয়া বাথরুমে যায়। সেখানে আগে থেকেই লুকিয়ে থাকা আসামী তার স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে কাঁধে তুলে পাশের একটি গ্রামে নিয়ে ধর্ষণ করে। এর পর সকালবেলা তার স্ত্রী পালিয়ে বাড়ি আসে।
পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করে। আসামীর উচ্চতা পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি। শরীরের গড়ন মধ্যম। বাদীর স্ত্রী ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার। মেডিকেল প্রতিবেদন বলছে, জোর করে ধর্ষণ করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে ভিকটিম হেভিচুয়্যাল সেক্সুয়ালিটির।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীকে দেখে বুঝলেন, এই ছেলেকে ৫ কেজি ওজনের বনমোরগ দিলেও সে অন্য গ্রামে হাতে বা কাঁধে বয়ে নিয়ে যেতে পারবে না। বাদীর উল্লেখ করা অন্য গ্রামটি প্রায় সাড়ে চার কি.মি দূরে। তাই আসামীর পক্ষে বাদীর সাড়ে পাচ ফুট আর ৬০ কেজি ওজনের বউকে নিয়ে অন্য গ্রামে যাওয়া সম্ভবই নয়। যেহেতু হাঁটাপথ ছাড়া আর অন্য উপায় নেই।
সেই গ্রামটিতে তখন কারেন্ট ছিল না। ঘরে ফ্যান চলেনি। ভিকটিম সামান্য চেঁচামেচি করলেও ঘরের ভিতরে থাকা ৪ জন মধ্যবয়সী মানুষ শুনতে পেতেন। তাছাড়া জোরপূর্বক ধর্ষিত হবার ঘটনার ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই ভিকটিমের মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়েছিল, আর মেডিকেল রিপোর্টে জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। ফলে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।
এর কয়েকদিন পর আসামী জেল থেকে মুক্তি পেল এবং ওই ভিকটিম আবার পালালো সেই পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি ছেলের সাথেই। ভিকটিম পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি সেই ছেলেটির সাথে বিয়ে করে এখন ভালো আছে, সুখে আছে।
ভিকটিমের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার স্বামী বিয়ের পর থেকেই মাসে প্রায় ২৫/২৬ দিন বাড়ির বাইরে থাকে। যে কদিন বাড়িতে থাকে সে কদিন শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। ফলে ভিকটিম তার প্রতিবেশি আসামীর সঙ্গে প্রায়ই স্বামীর অনুপস্থিতিতে মিলিত হতো।
আমার বক্তব্য হচ্ছে, কোনো মেয়ে ধর্ষণের শিকার হওয়াটা নিঃসন্দেহে বিচারিক বিভাগের আওতায় আসার দাবীদার, ধর্ষক দাবীদার নিন্দিত হওয়ার। কিন্তু মিছামিছি ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা কিংবা ধর্ষণের অভিযোগে নির্দোষ, নিরীহ ব্যক্তিকে হয়রানির শিকার হতে হবে কেন? কিংবা আইনের অপব্যবহারের সুযোগই বা কেন থাকবে?
সমাজে এমনও অনেক ধর্ষণ মামলার নজির মেলে যেখানে কথিত ভিকটিমের পরিবারই কোনো এক রুই-কাতলা টাইপের পরিবারের ছেলেকে ভিকটিম করে বড়ো অঙ্কের অর্থ হাতানোর আশায়; বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সফলও হয়! এবং বিস্মিত করার বিষয় এই যে এদের নিজেদের মান-সম্মানের কোনো তোয়াক্কা নেই। আবার এমনও হয় যেখানে আদৌ কেউ কাউকে ধর্ষণ করেইনি, কোনো তৃতীয় ব্যক্তি শুধু নিজের ফায়দা ওঠাতে ব্যস্ত হয়ে ঘটে যাওয়া অন্য মাত্রার ঘটনাতে বা নিজের মনগড়া ঘটনাতে ধর্ষণের তকমা লাগায়।
একজন নারী যখন ভালোবাসে কোনো পুরুষকে, নিজের সবটা দিয়েও তাকে নিজের করে রাখতে চায় সবসময়ের জন্যে। অথচ সেই পুরুষটিই তাকে উপহার দেয় এক তোড়া প্রতারণা। কোনো অনুকূল নির্জনতায় খুলে ফেলে ভদ্রতার মুখোশ! মেয়েটিকে গ্রাস করতে চায় বাসনামগ্ন কুৎসিত দু’বাহুর মাঝে। কেন? এই প্রবঞ্চনার নিহিতার্থ বহনকারী লোলুপ কামনাটি ঠিক কী ?
একটি মেয়ে নিজের বাবা মায়ের কাছে পরম যতেœ থেকেও কেবল আপনাকে পাশে পেতে আজ আপনার ঘরে বৌ হয়ে এসেছে। সে যতখানি সম্মান পাবার দাবীদার সে কি সেই সম্মান পাচ্ছে আপনার কাছ থেকে? আপনিও একদিন তাকে পেতে আকুল ছিলেন; আজ পেয়ে গিয়েছেন বলেই কি তার প্রতি ব্যাকুলতাশূন্য আপনি? তার কোনো আহ্বানই আজ আর মনে দাগ কাটে না কেন? কোন নতুনত্বের হাতছানিতে ভদ্র পরিবারের খোলস ছেড়ে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন, আপনি সেদিকে! কোন বালুচরে ঢেলে চলেছেন আপনারই উপার্জিত অর্থ? কোন মায়াবীকে দিয়ে ফেলছেন সবটুকু মনোযোগ?
রাত ১ টারও পর সকল চাহিদা মিটিয়ে যখন ঘরে ফিরছেন আপনি না খেয়ে তখনো সেজেগুজে আপনারই অপেক্ষায় বিছানার ধারে বসে থাকা আপনার স্ত্রী কি ন্যূনতম ভালোবাসাটুকুরও যোগ্য ছিল না! কিন্তু না, আপনি আজ যাবতীয় চাহিদার খোরাক বাইরের নন্দনেই পান। স্ত্রীকে কেবল নিজের আদল ভেবে ভেবে সন্দেহে করেন জর্জরিত, ভাষায় আনেন অশ্রাব্যতা। স্ত্রীর দিকে কখনো কোনো পুরুষ শপিংমলে দুবার ফিরে তাকালে কুদৃষ্টিতে তাকান স্ত্রীর দিকেই।
গভীর রাতে বাসায় ফেরার পর অশ্লীল কুকুকের ঘ্রাণশক্তি নিয়ে অন্য পুরুষের গন্ধ খুঁজে বেড়ান শোবার ঘরের বিছানায়। স্ত্রীর সাধ, তার আহ্লাদ কিছুই গুরুত্ব পায় না। পায় না তার কোনো চাহিদা স্বীকৃতি; হতে পারে তা জৈবিকতাও। তবে তাকে আপনার নিজের ক্ষুধাতৃষ্ণার সঙ্গী হয়ে প্রতিনিয়ত করা বৈবাহিক ধর্ষণকেও ‘স্বামীভক্তি’র স্বীকৃতি দিয়ে যেতে হয়। যার কোনো বিচার হবার জো নেই। যা নালিশ হয়ে সালিশে উঠবেই না কখনো।