শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ৫ মাঘ ১৪৩১

ছাত্রলীগের পায়ের নিচে বাঙালির শ্রদ্ধার ফুল!

| প্রকাশিতঃ ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ | ৬:৫৬ অপরাহ্ন

জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষা শহীদদের ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে সেই ফুল পায়ে মাড়িয়েছেন ছাত্রলীগকর্মীরা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা মহানগর উত্তর, বনানী থানা ছাত্রলীগ, ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ, রমনা থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার ব্যানার নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে শ্রদ্ধা জানানোর প্রতীক ও পবিত্র ফুলকে পদপিষ্ট করার এই ঘটনা ঘটে।

আজ রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রবেশ করা নিয়ে এ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তবে এই বিশৃঙ্খলার আগেই শহিদ মিনারে ফুল দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।

শহিদ মিনারের ফুল মাড়ানো নিয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, যুবলীগ ফুল দেওয়ার পরই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা প্রবেশ করেন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

ঠিক তখনই ছাত্রলীগের নেতাদের টপকিয়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ শহিদ মিনারে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে হাতাহাতি ও বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।

এ সময় শহিদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দেওয়া ফুল পা দিয়ে মাড়ানোর পাশাপাশি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ছাত্রলীগ এবং যুবলীগ নেতাকর্মীদের একে অপরকে আঘাত করতেও দেখা যায়। এসময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিশৃঙ্খলাকারীদের থামাতে হিমশিম খেতে দেখা যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিওতে সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ছাত্রলীগ বুঝি না, শহীদ মিনারে জুতা নিয়ে কেন প্রবেশ করবে? ফুল কি দিতে আসছে নাকি পাড়াইতে? শহীদের সম্মান দেখাতে এসেছে বলে মনে হয় না, বরঞ্চ অসম্মান করা হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে।

মুকুল নামে একজন লিখেছেন, ‘এ কেমন দেশ, এরা কেমন মানুষ। শিক্ষা নয় লোভই মানুষকে অন্ধ করেছে। চাটুকারিতাই মানুষের প্রধান নেশা আর স্বার্থ হাসিল করাই এখন প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

শহীদ আল মামুন লিখেছেন, ‘শোক ব্যাপারটা একদম বুকের গভীরে ধারণ করার জিনিস। যে শোক বুকের ভিতর থেকে বের করে সবার সামনে করতে হয় সেটা শোক না। সেটাকে বলে ধান্ধাবাজি।’

এধরনের ঘটনাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতারা। ছাত্রলীগের মত ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন সংগঠনের বর্তমান নেতা-কর্মীদের এমন আচরণকে বিব্রতকর উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
কামাল হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দার। যারা এই কাজগুলো করেছে তারা একুশে ফেব্রুয়ারির মর্ম বুঝে কিনা সেটাই আসল প্রশ্ন। ছাত্রলীগের সাথে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের আবেগজ ড়িয়ে আছে। এটা জ্ঞানের অভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের উচিত কর্মীদের রাজনৈতিকভাবে এসব প্রশিক্ষণ দেওয়া।’

ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের এধরনের ঘটনায় আমি খুবই বিব্রত। ছাত্রলীগ সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী। তাই ছাত্রলীগের এসব ত্রুটিগুলো কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা উচিত। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতাদের উচিত একটি সুনির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে তার সকল নেতাকর্মীদের নিয়ে আসা।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, এধরনের ঘটনা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ও হতাশার। আমি একে অপরাজনীতির চর্চা হিসেবে দেখি। যেখানে সুস্থ রাজনীতি থাকবে সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের ইদানীং বেশ কিছু ঘটনা নিয়ে আমরা বেশ ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত। ছাত্রলীগের সকল অর্জন ও সুনামকে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আর আজকের এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালির আবেগকে তারা গলা টিপে হত্যা করেছে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও বরাবরের মতো এবারও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।