সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

তারের জঞ্জাল সরাতে উদাসীন চসিক-পিডিবি

প্রকাশিতঃ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৮:০৬ অপরাহ্ন


জোবায়েদ ইবনে শাহাদত : চট্টগ্রাম নগরের প্রায় বৈদ্যুতিক ও সড়কবাতির খুঁটিতে ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনগুলো জড়িয়ে থাকছে একসঙ্গে। তারের এই জঞ্জালের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। নষ্ট হচ্ছে শহরের সৌন্দর্য, মানুষের চলাফেরাতেও সমস্যা। এসব সংযোগে শৃঙ্খলা আনার দায়িত্ব যাদের, তারা এ নিয়ে একবারেই উদাসীন।

এদিকে সিলেটের পর এবার চট্টগ্রামে ভূগর্ভে বিদ্যুতের তার নেয়ার প্রকল্প নিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। নগরীর তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্পের আওতায় আসবে ৫০০ কিলোমিটার এলাকা।

কিন্তু সব ঝুলন্ত তার ভূগর্ভে যাবে না। যে ইন্টারনেট, ডিশ, টেলিফোন তারের জঞ্জালের কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সেগুলো মাটির নিচ দিয়ে নেয়া হচ্ছে না। শুধু বিদ্যুতের তার ভূগর্ভে নেয়ার ফলে এ প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিতরণ) দক্ষিণাঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মকবুল হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মাটির নিচ দিয়ে তার নেয়ার কাজ শুরু হবে। নগরীর তিন হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও প্রাথমিকভাবে ৫০০ কিলোমিটার এলাকা এ প্রকল্পের আওতায় আসবে।’

তিনি আরো বলেন, নতুন সংযোগের অপেক্ষায় থাকা ৩৩ হাজার গ্রাহকদের জন্যই মাটির নিচ দিয়ে যাবে নেয়া হবে বিদ্যুতের তার। এই প্রকল্পে ইন্টারনেট এবং ক্যাবল তার অন্তর্ভুক্ত থাকছে না। তবে চট্টগ্রামে অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বিশ্লেষণ করে ক্যাবল তারের জঞ্জালকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমিয়ে আনতে ইন্টারনেট এবং ক্যাবল তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে জানিয়ে মোহাম্মদ মকবুল হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সিটি করপোরেশন সমন্বয় করে যদি এই বিষয়ে একটি নীতিমালা ঠিক করা হয়, তাহলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা থাকবে না।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ হোসেন একুশে পত্রিকাকে বলেন, ক্যাবল তার মাটির নিচ দিয়ে নেয়ার একটি প্রকল্প খুব শীঘ্রই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রথমে আমরা মাটির নিচ দিয়ে বৈদ্যুতিক তারের সংযোগ দিয়ে দেখবো। যেহেতু চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা একটি বড় ও দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পে মাটির নিচ দিয়ে সংযোগ দেয়ার পরিকল্পনা কতটা সফল হবে তা আমাদের দেখতে হবে।

যদি এই বিষয়ে সফলতা আসে তাহলে ইন্টারনেট ও ডিশের তারের ক্ষেত্রে একই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এগুবে বলে জানান তিনি।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ মাসে চট্টগ্রাম নগরের ১৭টি ছোট-বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ভর করা তারের জঞ্জালের কারণে। নগরের আরও শতাধিক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে আছে কেবল টিভি এবং ইন্টারনেটের তার।

কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬ এর ২৫ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোন সার্ভিস প্রোভাইডারদের যদি সংযোগ স্থানান্তরের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্থাপনা ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তাহলে সেই প্রতিষ্ঠানের থেকে লিখিত অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কেবল সংযোগের কাজে তারা কারও স্থাপনা ব্যবহার করতে পারবে না।

আইনের উপ-ধারা ২৮ (২) অনুসারে, যদি কোনও ব্যক্তি এই আইন লঙ্ঘন করে তাহলে তাকে সর্বোচ্চ দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এছাড়া অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান আছে।

কিন্তু এসব কেবল টিভি এবং ইন্টারনেটের তার বাড়ি বাড়ি নিতে গেলে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ভর দেয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ এসব তার টানার জন্য কোন অবকাঠামো বা বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করেনি বিদ্যুৎ বিভাগ কিংবা সিটি করপোরেশন।

জানতে চাইলে চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন একুশে পত্রিকাকে বলেন, বিষয়টি আমাদেরও খুব ভাবাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে সংযুক্ত এসব তারের কারণে প্রায়শই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। অবৈধ এসব তারের জঞ্জাল সরানোর জন্য আমি চসিকের বিদ্যুৎ শাখার প্রকৌশলীর সাথে গত সপ্তাহে কথা বলেছি।

তিনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার করে অবৈধ তারের জঞ্জাল সরানোর জন্য পেপার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কেবল অপারেটরদের নির্দিষ্ট সময় দিবো। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই তার সরানো না হলে বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে সমন্বয় করে আমরা এই অবৈধ তারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিবো।’

এ বিষয়ে চিটাগাং মাল্টি চ্যানেল লিমিটেড (সিএমসিএল) এর পরিচালক (প্রশাসন) কামরুল আলম শামীম একুশে পত্রিকাকে বলেন, সরকার যদি আমাদের তার টানার জন্য মাটির নিচে একটা রাস্তা করে দেয়, তাহলে আমরা সেটাই ব্যবহার করবো, যেটা মানুষের বাড়ি বাড়ি পর্যন্ত যাবে। প্রয়োজনে ভাড়াও দেব।

তিনি বলেন, এখন তার টানার ক্ষেত্রে প্রশাসন বা বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা সেই মোতাবেক কাজ করবো। আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সিটি করপোরেশনের কাছে এই বিষয়ে সমাধান চেয়েছি। কিন্তু কেউই আমাদেরকে কোনো সমাধান দিতে পারেননি। এখন বিকল্প ব্যবস্থা না করে হঠাৎ যদি এই তারগুলো সরিয়ে ফেলতে বলা হয় তাহলে আমাদের কী করার থাকে?

নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান একুশে পত্রিকাকে বলেন, পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ইন্টারনেট ও ডিশের তার সরাতে হবে। এসব তার নেয়ার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে। তারের জঞ্জালের কারণে নগরবাসী খুবই বিপজ্জনক জীবনযাপন করছে। বিদ্যুৎ বিভাগ ও চসিকের উচিত এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। না হলে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।