রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

তনু হত্যাকাণ্ডের ২ মাস, গ্রেফতার নেই

| প্রকাশিতঃ ২০ মে ২০১৬ | ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

তনুকুমিল্লা: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ২ মাস পূর্ণ হয়েছে আজ। গত ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের পাওয়ার হাউজের পাশে বাসার অদূরে একটি জঙ্গলে পাওয়া যায় তনুর মরদেহ। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচারের দাবিতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সারাদেশে।

পুলিশ, ডিবির পর বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দীর্ঘ ২ মাসেও এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ ডিএনএ প্রতিবেদনে তিন ধর্ষকের শুক্রাণু পাওয়ায় তদন্তে কিছুটা গতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। মামলা তদারকি করতে আগামী সপ্তাহে আবারও কুমিল্লায় আসছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিআইডির তদন্ত সহায়ক দল।

জানা যায়, তনু হত্যাকাণ্ডের পর মামলা তদন্ত সহায়ক দলের প্রধান সিআইডির পুলিশ সুপার আবদুল কাহহার আকন্দের নেতৃত্বে সিআইডি দফায় দফায় সন্দেহভাজন ব্যক্তি ছাড়াও তনুর পরিবারের সদস্য এবং বেশ কিছু সেনা সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। গত দু’ মাস অনেকটা জিজ্ঞাসাবাদের বৃত্তেই বন্দী ছিল চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ড।

গত ৩০ মার্চ মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রাম থেকে তনুর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু গত ৫২ দিনেও প্রকাশ করা হয়নি ২য় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। এর আগে মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যেই গত ৪ এপ্রিল প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শারমীন সুলতানা শাম্মীর ওই প্রতিবেদনে তনুকে ‘হত্যা ও ধর্ষণের’ আলামত পাওয়া যায়নি। কিন্তু ২য় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও কি অভিন্ন রিপোর্ট আসছে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

গত সোমবার কুমিল্লা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ড. নামজুল করিম খান জানিয়েছিলেন, তনুর অন্তর্বাস, কাপড় ও শরীরে তিন ধর্ষকের শুক্রাণু পাওয়া গেছে। এতে মামলার গতি কিছুটা ফিরে পেলেও এখনো কেউ গ্রেফতার হয়নি। প্রকাশ করা হয়নি ২য় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন। এরই মধ্যে তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে কুমেকের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা.কামাদা প্রসাদ সাহা ঢাকায় সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডিএনএ অ্যানালিস্টের কাছে গত ১৬ এপ্রিল চিঠি দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডির প্রধান ডিএনএ অ্যানালিস্ট নাসিমা বেগম ২১ এপ্রিল পাল্টা চিঠিতে জানান, মামলার তদন্ত কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কাউকে ডিএনএ প্রতিবেদন দেয়ার নিয়ম বা সুযোগ নেই। এরপর ডা.কামদা প্রাসাদ সাহা গত ২ মে তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের কাছে ডিএনএ প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেন। গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম গত ৪ মে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানান, তার হাতে তখন পর্যন্ত ডিএনএ প্রতিবেদন আসেনি।

এরপর ১৪ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আবার চিঠি দেন ডা. কামদা। এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মে দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন আদালতের মাধ্যমে ডিএনএ প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে।

এ বিষয়ে ডা. সাহা বলেন, ‘ডিএনএ প্রতিবেদন ময়নাতদন্তের একটি অংশ। তনুর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ময়নাতদন্তের অংশ। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের সময় তনুর দাঁত, নখ, চুল, সোয়াব ইত্যাদি আমরাই সরবরাহ করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিবেদনই আমাদের দেয়া হয়নি। তাই পরবর্তী কর্মদিবসে ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এদিকে তনু হত্যার ঘটনায় প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শারমিন সুলতানা শাম্মী ময়নাতদন্তের সময় আলামত গোপন কিংবা নষ্ট করেছেন কিনা এ বিষয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করেছে। একটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর এ হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তে কেন তিনি মৃত্যুর কারণ এড়িয়ে গেছেন তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে।

‘ধর্ষণ ও হত্যার’ আলামত খুঁজে না পাওয়া প্রসঙ্গে ডা. শারমিন সুলতানা জানান, ‘তনুর শরীরে কোথাও আমি হত্যা ও ধর্ষণের আলামত পাইনি। বিভিন্ন পরীক্ষায়ও হত্যা কিংবা ধর্ষণের আলামত বের করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি কারও চাপে কিংবা ভয়ে এ প্রতিবেদন দেয়নি। যা পেয়েছি, তাই দিয়েছি।’

এদিকে, ২ মাসেও ঘাতকরা গ্রেফতার না হওয়া, আটকে থাকা ২য় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার আলামত না পাওয়া প্রসঙ্গে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন শুক্রবার সকালে জানান, এখন ২য় ময়নাতদন্তকারী বোর্ডও কি আগের পথে যাচ্ছে কিনা আমরা সংশয়ে আছি।