ইমরান এমি : সংশোধিত সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেই অবশেষে গঠন করা হচ্ছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চট্টগ্রামের তিনটি ইউনিট কমিটি। ছাত্রত্ব নেই, বিবাহিত, কয়েক সন্তানের জনক- এমন কয়েকজনের নাম এসব কমিটিতে আসতে যাচ্ছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি গঠনের কাজ শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এর মধ্যে দক্ষিণ ও উত্তর জেলায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং মহানগরে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের ৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে সংগঠনটির রাজীব-আকরাম কমিটি। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হায়দার চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক জমির উদ্দিন মানিককে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
বাকি তিনজনের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কে এম আব্বাস মা ও বোনকে মারধর করে টাকা চুরির মামলায় গত ৫ জুলাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। কমিটির দুই শীর্ষ নেতা সভাপতি শহিদুল আলম শহিদ ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহসিন দু’জনই বিবাহিত ও সন্তানের জনক।
অপরদিকে জাহিদুর আফসার জুয়েলকে সভাপতি ও মনিরুল আলম জনিকে সাধারণ সম্পাদক করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এরপর আর কমিটি হয়নি। এ কমিটিতে স্থান পাওয়াদের বিরুদ্ধে আছে ক্ষমতাসীন দলের সাথে আঁতাত করার অভিযোগ।
অপরদিকে ২০১৩ সালের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি গঠনের সাত বছর হলেও বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দ্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু।
উত্তর ও দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি হলেও নগরে আসবে নতুন কমিটি। নতুন কমিটির শীর্ষ পদ পেতে তোড়জোড় শুরু করেছেন বিবাহিত ছাত্রনেতারাও। এবার বয়স্ক, অছাত্র ও বিবাহিত যারা দীর্ঘদিন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত তাদেরকে দিয়েই আহবায়ক কমিটি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে নগর ছাত্রদলের কমিটিতে শীর্ষ পদে আসতে বিবাহিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে আছেন আলিফ উদ্দিন রুবেল, জসীম উদ্দীন হিমেল, আবদুল্লাহ আল হাসান, সফিকুল আলম স্বপন,এন মোহাম্মদ রিমন, এস এম রুম্মন, আবু বক্কর সিদ্দিক, মাসুদুর রহমান মোহন, আকতার হোসেন বাবলু প্রমুখ।
অবিবাহিতদের মধ্য আহবায়ক পদে এগিয়ে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী মহসীন কবির আপেল, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর অনুসারী মো. সাইফুল আলম ও রিফাত হোসেন শাকিল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দীনের অনুসারী শরিফুল ইসলাম তুহিন, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী সৌরভ প্রিয় পাল, আসিফ নেওয়াজ বাবু।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী আসিফ চৌধুরী লিমন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরীর অনুসারি ইফতেখার উদ্দিন নিবলুও আলোচনায় আছেন।
সদস্য সচিব পদে ডা. শাহাদাতের অনুসারী সামিয়াত আমিন জিসান, তারেকুল ইসলাম তানভীর, জাফরুল ইসলাম রানা, গাজী শওকত, আরমানুল হাকিম ও জাহঙ্গীর আলম, আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী আরিফুর রহমান মিঠু ও কামরুল কুতুবী তদবির করছেন। এদের মধ্যে সাইফুল আলম, মহসীন কবির আপেল, রিফাত হোসেন শাকিল, সৌরভ প্রিয় পাল ও সামিয়াত আমিন জিশান পদ পাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন।
নগর ছাত্রদলের সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ একুশে পত্রিকাকে বলেন, নতুন কমিটি গঠনের কার্যক্রম চলছে। নতুন কমিটিতে বিবাহিত ও অবিবাহিতদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হবে বলে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল জানিয়েছে। তাই সবাই ফরম নিয়েছে। আমরা নগর কমিটির পাশাপাশি থানা ও কলেজ কমিটির জন্য ফরম দিচ্ছি। আমরা আশা করি বিবাহিত হওয়ার কারণে আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে থাকা নেতাদের যেন বাদ দিয়ে কমিটি করা না হয়। সকলের সমন্বয়ে কমিটি হলে বিগত সময়ে যারা দলের জন্য শ্রম দিয়েছে তারা শেষ সময়ে দলের একটি পদ পাবে।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে আমাদের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হোক। যেন পুরাতন যারা আছেন তারা দলের নেতৃত্বে আসতে পারে। না হয় ২০০০ ব্যাচ ধরে বিবাহিত ও অবিবাহিতদের সমন্বয়ে একটি আহবায়ক কমিটি করা হোক। প্রয়োজনে সেটি করার তিন মাস পর নতুন কমিটি করার দাবি জানাচ্ছি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একজন ব্যক্তি একুশে পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রামের দুইটি ইউনিটে আমরা যে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে যাচ্ছি সেগুলো রাজীব-আকরাম ভাইয়ের কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল। সে সময়ে নানা সমস্যার কারণে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়ে উঠেনি। পরবর্তী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে কমিটি করার জন্য, সংগঠনের নেতা হওয়ার জন্য বয়স ও কিছু নিয়ম সংশোধন করেন। তারই প্রেক্ষিতে আমাদের কমিটিতে নিয়মিত ছাত্র ও অবিবাহিতদের নেতৃত্বে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা ও নগর পর্যায়ে দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকার কারণে রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামে থাকা অনেকে দলীয় পদ-পদবীতে আসতে পারেননি। সেটা বিবেচনায় এনে, জেলা ও নগর কমিটিতে শীর্ষ পদ ছাড়া অন্য পদগুলোতে বিবাহিতদের রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।