জসিম উদ্দীন, কক্সবাজার : করোনাভাইরাস কক্সবাজার জেলায় ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে করে জেলার প্রায় ঘরে এখন করোনা রোগী কিংবা উপসর্গ নিয়ে নারী-পুরুষের বসবাস। দিন যতই গড়াচ্ছে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
এর মাঝে কিছুটা স্বস্তির খবর হচ্ছে কক্সবাজার জেলার লবণ শিল্পের সঙ্গে জড়িত দুই লক্ষাধিক লবণ চাষি-শ্রমিকদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত একজনেরও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। করোনামুক্ত আছে, অতি লবণাক্ত এলাকা প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, মহেশখালীর সোনাদিয়া, মাতারবাড়িসহ কয়েকটি এলাকা।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি অংশ বাদ দিলে দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদন জেলা কক্সবাজার। জেলায় প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে সরাসরি লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও শ্রমিক হিসেবে কাজ করে থাকে দুই লাখের অধিক নারী ও মানুষ।
লবণ সরবরাহ করতে গিয়ে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কক্সবাজারে ঢুকছে শত শত ট্রাক, সঙ্গে সেখানকার বাসিন্দারাও। এ প্রেক্ষিতে করোনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে আলোচনায় এসেছিল লবণ শিল্পের মানুষগুলো। সংক্রমণ রোধে লবণ মিল বন্ধ, বাইরের ট্রাক ও অন্য জেলার বাসিন্দাদের কক্সবাজারে ঢুকতে না দেয়ার দাবিতে মানববন্ধনও করেছিল স্থানীয়রা। কিন্তু সব হিসেব-নিকেশ ভুল প্রমাণিত করে এখনো পর্যন্ত করোনামুক্ত লবণ সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো।
১ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার সিভিল সার্জন দেয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৬৬৯ জন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের।
বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. নুরুল কবির একুশে পত্রিকাকে বলেন, এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের কোথাও লবণ শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। তবে করোনায় কয়েকজন লবণ মিল মালিকের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার ইসলামপুর লবণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আনোয়ার সাদাত খোকন একুশ পত্রিকাকে বলেন, করোনায় লবণ শিল্প বিধি-নিষেধের আওতার বাইরে থাকায় প্রতিদিন শিল্প এলাকা ইসলামপুরের ৫০টির অধিক লবণ মিলে প্রায় ৫ হাজার মত শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকদের কেউ এখনো পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে যাননি। অথচ স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্ব মানার মত কোন পরিবেশে শ্রমিকদের জন্য এখানে নেই।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, পরিশ্রমী মানুষদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। লবণ শ্রমিকরা করোনায় আক্রান্ত না হওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। তবে লবণে করোনা দুর্বল হয় কিনা এটি গবেষণা করে দেখা দরকার।
যদিও গবেষণায় দেখা গেছে, লবণ-পানি সাধারণ সর্দি-জ্বরের লক্ষণ কমাতে পারে। যারা লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করেন এবং নাক পরিষ্কার করেন, তাদের কাঁশি কম হয়। কফ জমার সমস্যাও হয় কম। তারা তাড়াতাড়ি সেরে উঠেন।
সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় লবণ-পানি ব্যবহার কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করে দেখছেন যুক্তরাজ্যের এডিনবরার একদল গবেষক। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অনুসন্ধান করে দেখছেন, লবণ-পানি কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক হয় কিনা। গবেষকরা বলছেন, লবণ পানিতে যদি করোনা দুর্বল হয়ে যায়, তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে বৈশ্বিক মহামারী করোনাকে রুখে দেয়া যাবে।