চট্টগ্রাম : ‘নামাজ পড়ে এসে বাসায় ভাত খেতে বসেছিলেন আব্বু । এসময় ফোন পেয়ে দ্রুত বেরিয়ে যান তিনি। এর পরপরই গোলাগুলি শুরু হয়। কিছুক্ষন পর খবর পাই আব্বু গুলিবিদ্ধ।’ কথা গুলো নিহত ফরিদুল ইসলাম ফরিদ (৩৫) এর মেয়ে নবম জারাহ’র। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়েলটিতে কেঁদে কেঁদে কথা গুলো বলছিলেন তিনি।
শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রামে স্যাটেলাইট ক্যাবল অপারেটরের ব্যবসার দখল নিয়ে গোলাগুলিতে ফরিদুল ইসলাম ফরিদ (৩৮) নিহত হয়েছেন।
ফরিদ চকবাজার থানার চান মিয়া মুন্সী লেইনের মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে। তিনি চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি এক কন্যা ও একটি ছেলে সন্তানের জনক রয়েছে। মেয়ে জারাহ নবম শ্রেণিতে আর ছেলে পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ডিসি রোডে ক্যাবল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ আছে কেসিটিএন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের। এর মালিক স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত বাদশা। ওই এলাকার বাসিন্দা কথিত আওয়ামী লীগ নেতা মো. মুছা এ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছিলেন। মূলত এর থেকে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর আগেও কয়েকবার বাদশার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটেছে।
এর ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সকাল থেকে আকস্মিকভাবে নগরীর দিদার মার্কেট এলাকা থেকে ডিসি রোডের দিকে ক্যাবলের টানা শুরু করে মুছার লোকজন।
খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে অনুমোদনবিহীন এই ক্যাবল টানার কাজ বন্ধ করে দেন। দুপুরে জুমার নামাজের পর আবারও কাজ শুরু হয়। এ খবরে বাদশা’র লোকজন তাদের বাধা দেয়। এর জের ধরে ডিসি রোডে মিয়ার বাপের বাড়ির সামনে গোলাগুলি শুরু হয় দুইপক্ষে। স্থানীয় মহল্লা সর্দার কমিটির সভাপতি হিসেবে ফরিদ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বাদশার পক্ষ হয়ে। এসময় তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ফরিদুলকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। তখন তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় দায়িত্বরত চিকিৎসক। তার বুকে গুলি লেগেছিল।
কেসিটিএন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের পরিচালক শ্যামল পালিত কাঞ্চন বলেন, কয়েকদিন আগে দিদার মার্কেট এলাকায় আমাদের ১২জন গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় চকবাজার থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি আমরা। পুলিশ এ অভিযোগ জিডি হিসেবে রেকর্ড করেই দায় সেরেছে।
চকবাজার থানার ওসি নুরুল হুদা বলেন, ডিশের লাইন দখল-বেদখলের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ একজন মারা গেছেন। কে গুলি করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
একুশে/এএ