আবু আজাদ, পটিয়া থেকে : পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামীকালের জনসভাকে ঘিরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে গোটা পটিয়া শহর।
পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে জনসভাস্থলসহ আশপাশের এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পুরো শহরজুড়ে তৈরি করা হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। পাশাপাশি তৎপর রয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
প্রায় সতের বছর পর শেখ হাসিনা পটিয়া আসছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এবারই প্রথম। সরকারের শেষ মুহূর্তে তার এ সফর দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষের কাছে ব্যাপক গুরুত্ব বহন করছে। উন্নয়নের পাশাপাশি প্রত্যাশা নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দাবি করা হচ্ছে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আ.লীগের উদ্যোগে আয়োজিত এই জনসভাকে ঘিরে পটিয়াজুড়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার অবতরণের জন্য চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে একটি এবং পটিয়ার কমলমুন্সির হাট এলাকায় খালি জমিতে দু’টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে।
এখন এসব হেলিপ্যাড এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দিনরাত কাজ করছেন। জনসভার মঞ্চ তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। নিরাপত্তাজনিত কারণে জনসভাস্থলের আশপাশের ঘর বাড়িতে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার দু’দিন পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনসভাস্থলের আশপাশের ঘর–বাড়ি, বিভিন্ন অফিস–আদালত, ব্যবসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এছাড়া জনসভাস্থল ও আশপাশের এলাকায় চালানো হচ্ছে বিশেষ পরিচ্ছন্ন অভিযান। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘর বাড়ি ও দোকানের সাইনবোর্ড পরিস্কার এবং নতুনভাবে রাঙানো হচ্ছে। পৌরকর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ঘর–বাড়ি, ব্যবসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। রাস্তার দু’ধারের ডিভাইডারগুলোতেও চলছে সাজসজ্জার কাজ।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে ৩ হাজারের অধিক পুলিশ সদস্য, আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, র্যাব, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) ও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সসহ (এসএসএফ) বিভিন্ন আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নি্নিদ্র নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থা জনসভাস্থল ও আশপাশের এলাকা জুড়ে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু জনসভাস্থল নয়; আশপাশের এলাকা ও কমলমুন্সির হাট এলাকায় নির্মিত হেলিপ্যাড এলাকায় প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে।
এদিকে সমাবেশস্থলে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। মাঠ আর মঞ্চ তৈরী হয়ে গেছে সকালেই। এখন চলছে সাউন্ড সিস্টেম ও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ। বিকেলে মাঠে নিজে উপস্থিত থেকে কাজের তদারকি করছেন পটিয়া আসনের এমপি শামশুল হক চৌধুরী ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের এমপি ড. আবু রেজা নদভী।
শামশুল হক চৌধুরী এমপি একুশে পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি শেষ, এখন অপেক্ষা সমাবেশের। পটিয়ার এ জনসভা জনসমুদ্রে পরিণত হবে। দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো জনসভার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষ আসতে শুরু করেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ জেলার সব সংসদ সদস্য, মন্ত্রী সার্বিক সহযোগিতা করছেন। নিজ নিজ এলাকায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিকবার জনসভার মাঠ পরিদর্শন ও মনিটরিং করেছেন। আটটি সাংগঠনিক উপজেলা কমিটি মাইকিং, পোস্টার ও প্রচারপত্র বিলির মধ্য দিয়ে জনসভা সফল করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।’
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, `তিন হাজার ফোর্স আমরা মোতায়েন করছি। এর মধ্যে ১৩০০ ফোর্স চট্টগ্রামের বাইরের এবং ১৭০০ ফোর্স জেলা থেকে যাচ্ছে। হেলিপ্যাড থেকে জনসভাস্থলের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। এই পুরো পথটাতে হিউম্যান চেইনের মতো পুলিশ বেষ্টনী থাকবে। জনসভাস্থল পর্যন্ত পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর বিশেষ ‘হিউম্যান ট্রেন’ তৈরি করা হবে। জনসভাস্থল ও আশেপাশে এসএসএফ, পিজিডি, পোশাকধারী পুলিশ ও সাদা পোশাকের চার স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বেস্টনি তৈরি করা হবে। সাথে থাকবে মোবাইল পার্টি। তাছাড়া পুলিশের প থেকেঞ্জ ৫০টি উচ্চ মাত্রার ‘ক্লোজ সার্কিট’ ক্যামেরা বসানো হয়েছে। রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে চন্দনাইশ থেকে ক্রসিং পর্যন্ত ৫শ’ ট্রাফিক পুলিশ দেয়া হয়েছে। জনসভার আশপাশে হাইরাইজ বিল্ডিংগুলোর উপর ও নিচে আইন–শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া সাদা পোশাকে থাকবে পুলিশ সদস্যরা।
এ বিষয়ে পটিয়া থানার ওসি শেখ নেয়ামত উল্লাহ জানান, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী আসছেন। তাই এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের অবহেলার সুযোগ নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের লোকজন সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন।
একুশে/এএ