রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

হাসতে হাসতে মানুষ খুন করেন নাছির, অভিযোগ মহিউদ্দিনের (ভিডিওসহ)

প্রকাশিতঃ ১০ এপ্রিল ২০১৭ | ৭:৫৯ অপরাহ্ন

চট্টগ্রাম : ‘উনি আরো বলেন কি, উনি হেসে হেসে লোককে গুলি করতে পারেন। কক্সবাজার কমিশনার লই গেইয়ি… বলে জানছনি আই হাসি হাসি মানুষ গুলি গরি মারি ফেলাইত পারি। তা করেছেন তো হত্যা করেছেন আপনি। আপনার তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামে ১২টা লোককে হত্যা করেছেন। এই যে খুনি মেয়র.. যে দায়িত্বে বসে আছেন.. সংশোধন হয়ে যান না। বহু খুনি সংশোধন হয়েছে। আপনি হচ্ছেন না, হুমকি দিচ্ছেন। তাই চট্টগ্রামবাসী আমরা ক্ষুব্ধ।’

সোমবার বিকেলে চট্টগ্রামের লালদিঘীতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের প্রতি ইঙ্গিত করে কথাগুলো বলেছেন সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বর্ধিত হারে হোল্ডিং ট্যাক্স (গৃহকর) আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং মৎস্যজীবীদের অধিকার আদায়ে সোনালী যান্ত্রিক মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ব্যানারে আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে ৫০ লাখ মানুষ বসবাস করে। মানুষের সমস্যার শেষ নেই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। পরিকল্পিতভাবে সেই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। নির্বাচনে কেউ এমপি হন, মেয়র হন, কেউ কাউন্সিলর হন। সংসদে কথা না বলে তারা বন্দরে বসে থাকেন। কে কে- বিচ্ছু (পটিয়ার এমপি শামসুল হক), লতিফ (বন্দরের এমপি এমএ লতিফ), আর মনজুর ভাইপো (সীতাকুণ্ডের এমপি দিদারুল আলম; তারা সংসদ সদস্য, সংসদে কথা বলে না। বলে বন্দরের চেয়ারম্যানের বাসভবনে, অফিসে। লজ্জা লাগে না?’

‘আপনি সংসদ সদস্য বসে থাকেন বন্দরের চেয়ারেম্যানের চেম্বারে। এটা আপনার দায়িত্ব? সেখানে কী করছে? ব্যবসা করছে। কিসের ব্যবসা? জাহাজের ব্যবসা, লোহার ব্যবসা, ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার ব্যবসা। এবং আরেকজন আছেন, আমাদের নাছির সাহেব। উনি আমাদের সন্তান, অনেকেই বলেন, পরে কথা বলেন, পরে না, কেউ অন্যায় করলে অবশ্যই কথা বলবো। কথা অনেক বলেছি, নাছির সাহেব, সিটি করপোরেশনের দরজায় তালা মেরে সার্বক্ষণিক বন্দরের চেয়ারম্যানের চেম্বারে বসে থাকেন। তিনি চারটা স্টিভিডোরশিপ নিয়েছেন। একজন একটা নেবেন, তিনি চারটা কোন বাহুবলে নিয়েছেন। তিনি কাজগুলো করছেন।’

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনে একজন অ্যাস্টেট অফিসার আছে, একজন সিআরও (প্রধান রাজস্ব অফিসার) আছে। কিন্তু আরও ৭-৮ পদ আছে, সেখানে স্থায়ী কেউ নেই। অস্থায়ী লোক নিয়ে সিটি করপোরেশন চালাচ্ছেন। পাগলের আড্ডাখানা বানিয়েছেন। করপোরেশনে থাকেন না। নি (নাছির) থাকেন না, তালা মেরে রাখেন। তার কিছু তল্পিবাহক, যারা তার নামে স্লোগান দেন তাদের সেখানে চাকরি দিয়েছেন। তাই বলবো নাছির সাহেব, আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী চট্টগ্রামে এসে আপনাকে সাবধান করে দিয়েছেন, আপনি পরিবর্তন হচ্ছেন না। তাই বলবো, এই সভার পর থেকে আপনার অসৎ ইচ্ছা, চক্রান্ত বন্ধ রাখুন। তা না হলে কী করতে হবে তা মহিউদ্দীন চৌধুরীর জানা আছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘হোল্ডিং ট্যাক্স ১৭ শতাংশ নিচ্ছেন। আমি দিতে রাজী আছি। কিন্তু দুই শতাংশ ট্যাক্স বাড়িয়ে নিচ্ছেন। শহরের আদি বাসিন্দারা যাতে শহর ছেড়ে চলে যায়, এজন্য চক্রান্ত করছেন। এটা কি আপনার ইচ্ছা। এই ইচ্ছা পরিহার করুন। কারো দুই গন্ডা জায়গা আছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে কোনোরকমে চলছে, তাদেরকে ট্যাক্সের নামে হুমকি দিয়ে গৃহচ্যুত করছেন। হুমকি দিয়ে গৃহচ্যুত করার কোনো অধিকার আপনার নেই। যারা ট্যাক্স দিতে পারবে না, মাফ করে দেন। জুলুম করবেন কী কারণে।’

‘এই ট্যাক্স মানুষের বোঝা হয়েছে। সেই বোঝা যাতে সামনে বইতে না হয় সেজন্য আপনাকে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নেবেন। আমাকে ডাকলে আমি যাব কিন্তু উনি তো আমার কোনো পরামর্শ নেন না। আমি যখন দায়িত্বে ছিলাম, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব খাত চালিয়েছি, ট্যাক্স বাড়ায়নি। কিন্তু আপনি বাড়াচ্ছেন, উন্নয়নতো করেননি। প্রথমে উন্নয়ন করেন, তারপর আমরা ট্যাক্স বাড়িয়ে দেব।’

মহিউদ্দিন বলেন, ‘বর্ধিত ট্যাক্স না দেওয়ার জন্য আমরা মামলা করেছি। আদালত ট্যাক্স না দিতে আদেশ দিয়েছেন। কোন কারণে আপনি এই আদেশের বিপক্ষে আপিল করেছেন। আপিলেও একই রায় বহাল ছিল। অর্থ্যাৎ পূর্বের রায়ও সঠিক ছিল। এই দায়িত্ব পালন করতে পারলে করুন, অন্যথায় আপনি কী করবেন, আপনি স্বেচ্ছায় ঠিক করুন।’

তিনি বলেন, ‘বন্দরের স্টিভিডোরশিপ নিয়েছেন। সালিশ-বিচারের নামে জায়গা-জমি দখল করছেন। কিছু হলে উনি ঢুকে পড়েন। ঢুকে হিস্যা নিয়ে নেন। নাছির ভাই, আপনি আমাদের সাধারণ সম্পাদক, আপনাকে নেত্রী মনোনয়ন দিয়েছে, তাই আপনাকে আমরা মেয়র পদে বসিয়েছি। তাই বলে, জনগণের সাথে তো প্রতারণা করতে পারবেন না। আমরা দেব না।’

‘আড়তে গরীব লোকেরা ছিল, তাদেরকে উৎখাত করে সেখানে বিল্ডিং করার জন্য প্লট বিক্রি করেছেন। এটা কি আপনার কাজ? পাথরঘাটায় প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক আছে, ২০-৩০টি আড়ত আছে। উনি সে জায়গা হুকুম দখল করে নেয়ার জন্য… ওয়াকফ সম্পত্তিকে জোর করে ১১০টা দোকান করেছেন। আড়ত করেছেন। বাধ্য করেছেন সেখানে যাওয়ার জন্য। তারা আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীকে বলবো, আপনারা আমাদের ভাই, সন্তান, কারো হুমকিতে নরম হবেন না। সে হুমকি দিয়েই চলেছে। মানুষের মন জয় করতে পারেনি।’

‘রংপুরের একজন মেয়রকে যদি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়। আপনাকে দিচ্ছে না। কারণ আপনি অযোগ্য। এনএসআই, ডিজিএফআই রিপোর্ট দিয়েছে। আপনাকে অপসারণ করতে হবে।’ বলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা লীগ, ১৪ দল, শ্রমিক লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

### বিজয় মেলার পক্ষে নন নাছির, অভিযোগ মহিউদ্দিনের
### নাছিরের আচরণ অশোভন, মন্তব্য মহিউদ্দিনের
### রাষ্ট্রপতির আত্মীয়, কি আসে যায়?
### চট্টগ্রাম চেম্বারে যারা অাছেন, সুদখোর : মহিউদ্দিন